১০টি গোপন অভ্যাস যা আপনাকে অবশ্যই ধনী করে তুলবে
আপনি কি চান যে আপনার টাকা আপনার জন্যে কাজ করুক? তাহলে বিনিয়োগ করুন। সফল বিনিয়োগকারীদের কয়েকটি অভ্যাস এখানে তুলে ধরলাম যা আপনাকে আপনার সম্পদ তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।
আপনি আপনার টাকাকে আপনার জন্যে কাজ করাতে চাইলে বিনিয়োগ করুন। যদিও সব বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের মতো বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠেনি, আপনি অবশ্যই সঠিক বিনিয়োগ করে সফল আর্থিক ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন।
মনে রাখবেন যে রাতারাতি ধনী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। প্রচুর ধন-সম্পদ জমা করতে অনেক ধৈর্য এবং স্মার্ট বিনিয়োগ লাগে। আপনার অর্থ দিয়ে কোনও ধরণের ঝুঁকি নেবার আগে বিনিয়োগের সম্পর্কে প্রয়োজনীয়তা বিষয়গুলি সম্পর্কে যতটা সম্ভব জেনে নিন।
সাময়িক ব্যর্থতা যেন আপনার গ্রাস করতে না পারে। যেমন ধরুন আপনি এবং একটি বন্ধু একই সময়ে বিনিয়োগ শুরু করেছিলেন, তবে আপনি তার মতো সফল হতে পারেন নি। এটা হতেই পারে। বৃহত্তর চিত্রটি মাথায় রাখুন, কারণ ভবিষ্যতে আপনার জন্য কী পরিকল্পনা করেছে তা আপনি কখনই জানেন না। সুতরাং, আপনার প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থতা হওয়ায় হাল ছাড়বেন না। আপনার ভুল থেকে শিখুন এবং বিনিয়োগ চালিয়ে যান।
প্রতিনিয়ত বিনিয়োগের ব্যাপারে শেখা এবং কখনও ছাড় না দেওয়ার মনোভাবের পাশাপাশি আপনাকে নিজেকে সফল বিনিয়োগকারীদের মতো ভাবতে করে ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করার জন্যে আমরা সফল বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সময় অনুসরণ করেন এমন কিছু অভ্যাস এবং পদ্ধতির তালিকা তৈরী করেছি।
গবেষণা
বিনিয়োগের আগে আপনার বিনিয়েগের প্রাথমিক বিষয়গুলি বুঝতে হবে। বিনিয়োগ করার আগে বিভিন্ন বিকল্প বিনিয়েগের রাস্তা জানতে হবে এবং সেগুলি কাজ করে তা জেনে নিতে হবে। তাহলে আপনি যখন আপনার অর্থ বিনিয়োগ শুরু করবেন তখন জেনে বুঝে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
অনলাইনে বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগ করার মতো পণ্য সম্পর্কে প্রচুর গবেষণা রয়েছে। আপনি আর্থিক বিষয়ক ওয়েবসাইট এবং টিভি বা ইউটিউব চ্যানেলগুলি ট্র্যাক করে আপনার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে পারেন। সহজ লাগছে, তাইনা? মনে রাখবেন, জ্ঞান শক্তি।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন
লজ্জা পাবার কিছু নেই! এমনকি সেরা বিনিয়োগকারীরাও বাজারকে আরও ভালভাবে বুঝতে এবং তাদের জন্য পরিকল্পনা যাচাই করার জন্য বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করেছেন।
যেমনটি আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, আপনি ফিন্যান্স বিষয়ের ব্লগ এবং সংবাদপত্র/ম্যাগাজিন পড়ার মাধ্যমে, ওয়েবসাইট ফিনান্সিয়াল আর্টিকেল পড়ে, ফিনান্স চ্যানেলগুলি দেখে এবং বিনিয়োগের উপর বই পড়ার মাধ্যমে বিনিয়োগ সম্পর্কে আপনার জ্ঞান যথেষ্ট বাড়াতে পারেন। কিন্তু বিনিয়োগের সময় কোনও আর্থিক বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করলে অবশ্যই তা আপনার জন্যে উপকারী হবে।
আপনি হয়ত ইতিমধ্যে অনেক সময় ব্যয় করেছেন, পড়াশুনা করেছেন, তারপরও একজন আর্থিক পরামর্শদাতারা আপনাকে তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে আপনাকে বাস্তববাদী পরামর্শ দিতে পারবেন। তাদের অভিজ্ঞতা এবং চলতি বাজার সম্পর্কে তাদের অভ্যন্তরীণ জ্ঞানের কারণে তারা আপনার দ্বিধা দূর করতে পারবেন এবং আপনার চাহিদা অনুযায়ী একটি পোর্টফোলিও তৈরি করতে সহায়তা করবেন।
বিনিয়োগে বৈচিত্র
সর্বাধিক সফল বিনিয়োগকারীরা জানেন যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি সম্ভবত ‘asset allocation’, ‘diversification’ এবং ‘risk appetite’ এর মতো শব্দগুলি শুনেছেন। বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে এই বিষয় গুলিতে ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বিনিয়োগ শুরু করার আগে আপনার কাছে একাধিক বিনিয়োগ কৌশল তৈরী থাকা দরকার। মূলত, আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন ভাগে কি পরিমান টাকা বিনিয়োগ করতে চান তা পরিকল্পনা করতে হবে। তারপরে, একই সাথে ঝুঁকি কমিয়ে আপনার সাফল্যের হার বাড়ানোর লক্ষ্যে আপনার বিনিয়োগকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈচিত্র্য (investment diversification) আনতে হবে।
বিনিয়োগ করার সময়, আপনার সমস্ত ডিমকে একটি ঝুড়িতে না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। সত্যিকার অর্থে, কোনও ঝুড়িতে খুব বেশি ডিম দেওয়া বিশেষত বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আপনার পোর্টফোলিতে অতিরিক্ত-বৈচিত্র্য থাকলে তা আপনাকে তেমন সুবিধা দিবে না আবার ঠিক তেমনি একেবারেই বৈচিত্র রাখবেন না তাও না।
আপনার জ্ঞান এবং বিশ্লেষণ দক্ষতা একটি সফল বিনিয়োগ কৌশল তৈরী করতে বড় ভূমিকা পালন করে। আপনি যত বেশি বাজার, পণ্য এবং বিকল্পগুলি সম্পর্কে জানবেন, আপনি তত ভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। সুতরাং, বিনিয়োগের আগে ভালমতো প্রস্তুতি নিয়ে নিন।
শেয়ারকে ব্যবসায় হিসাবে বিবেচনা করুন
সাধারণভাবে, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী স্টকগুলিতে খুব বেশি মনোযোগ দেয় না। তবে ওয়ারেন বাফেটের মতে- স্টকহোল্ডাররা যে ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন, তারা নিজেদেরকে ওই ব্যবসার ‘আংশিক মালিক’ বিবেচনা করা উচিত। এই ধরণের মানসিকতার সাথে বিনিয়োগকারীরা অপ্রুস্তুত এবং অপরিকল্পিত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া এড়াতে সক্ষম হবেন। তার পরিবর্তে, তারা দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলগুলিতে আরও ফোকাস দিবেন, যার ফলে কোনও শেয়ার কেনা-বেচার আগে বিশ্লেষণ এবং চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। এভাবে চিন্তা করে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগ থেকে আয় করার সম্ভাবনা বাড়ে।
অ্যাক্টিভ ট্রেডিং কমিয়ে দিন
সফল বিনিয়োগকারীরা আপনাকে আপনার পোর্টফোলিও টার্নওভার কমানোর পরামর্শ দেবে। আপনি যদি না জেনে থাকেন যে পোর্টফোলিও টার্নওভার কি, এর মানে হচ্ছে অ্যাক্টিভ ট্রেডিং বা কোনও বিনিয়োগকারীর স্টক প্রতিনিয়ত কেনা বেচা বোঝায়। যদিও অ্যাক্টিভ ট্রেডিং বিনিয়োগকারীদের প্রচুর অর্থ আনতে পারে তবে এটা একই সাথে তাদের রিটার্নকে হুমকিতেও ফেলে। কিভাবে? আপনার লাভের উপর ট্যাক্স দিতে হবে এবং পাশাপাশি বৎসরিক কমিশনের পরিমাণবেড়ে যাবে।
এই কারণেই সমস্ত সফল বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবসময় দীর্ঘমেয়াদী মানসিকতা নিয়ে বিনিয়োগ করেন। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের মাধ্যমে, আপনি বিশাল আকারের কমিশন ফি এবং কর এড়াতে পারবেন। দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ আপনার অর্থকে স্বল্প-মেয়াদী বাজারের ওঠানামা থেকেও সুরক্ষিত রাখে এবং সময়ের সাথে সাথে আয় বাড়িয়ে দেয়।
বিনিয়োগকারীর মনোবিজ্ঞান
প্রতিটি সফল বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক মানসিকতা বজায় রাখেন। এর মধ্যে সম্ভাব্যতা, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যৌক্তিক পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত। তারা তাদের অনুভূতির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়। আপনি যদি বিনিয়োগে নতুন হন এবং তারপরও অভিজ্ঞদের মতো বিনিয়োগ করতে চান, তবে আপনাকে এই মানসিকতাটি ধারণ করতে হবে।
এছাড়াও, খুব বেশি বাজারের পূর্বাভাসের উপর নির্ভর করবেন না। বেশিরভাগ সফল বিনিয়োগকারী ভবিষ্যতের ভবিষ্যদ্বাণীগুলির চেয়ে তাদের নিজস্ব গবেষণার উপর বেশি নির্ভর করে। খেয়াল রাখবেন যে বাজারের সাময়িক উত্থান বা পতন যেন আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত না করে।
দীর্ঘমেয়াদী মানসিকতা
বেশিরভাগ সফল বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের ব্যাপারে ধৈর্যশীল। যখন বিনিয়োগের কথা আসে, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেন। স্বল্পমেয়াদী চিন্তাভাবনা প্রায়শই ভয়াবহ ভুল সিদ্ধান্ত এবং আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাজারের অস্থিরতা এবং মূল্যস্ফীতির কারণে স্বল্প-মেয়াদী বিনিয়োগগুলি খুব বেশি লাভজনক হয় না।
এছাড়াও, বাজারের উত্থান-পতনের কারণে কিছু ফান্ড স্বল্পমেয়াদে ভাল কাজ করে না। অনেক সময় সমস্ত টাকা হারাবার ভয়ে বেশিরভাগ লোক এই সময়ে তাদের স্টক বিক্রি করার দিকে ঝোঁকে। তবে, তারা বুঝতে পারে না তা যে তারা ইতিমধ্যে টাকা হারাচ্ছে। ঠিক এই কারণেই, যখনই আমরা বিনিয়োগের কথা বলি, আমরা সর্বদা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের উপর জোর দিয়ে থাকি।
অতীত ভুল থেকে শিখুন
ন্যাড়া একবারই বেল তলায় যায়। প্রত্যেক সফল বিনিয়োগকারী আপনাকে বলবে যে তারা তাদের আগের ভুলগুলি থেকে অনেক কিছু শিখেছে। মানুষ মাত্রই ভুল করে। আপনার ভুল বিনিয়োগ আপনাকে বিনিয়োগ থেকে দূরে সরে যাবার চেয়ে, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের বারের জন্য আরও ভাল করে ভেবে চিন্তে বিনিয়োগ করতে শিখাবে।
কঠিন দিনের জন্য পরিকল্পনা
বেশিরভাগ সফল বিনিয়োগকারীদের জন্য, ‘কঠিন সময়ের’ পরিকল্পনাই তাদের শীর্ষস্থানে অবস্থান নিয়ে যায়। জরুরী অবস্থা বা বিপদ কখনও জানান দিয়ে আসে না । আপনি যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বা চাকরি হারান তবে কী হবে? আপনার তারপরও আপনার পরিবারের দেখভাল করতে হবে, তাই না? ঠিক এই কারণেই একটি কন্টিনজেন্সি ফান্ড থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যা অন্তত আপনার পরিবারের ছয় মাসের ব্যয়ের সমান। জরুরি তহবিল গঠনের পাশাপাশি, জীবন ও স্বাস্থ্য বীমাতে বিনিয়োগ করার চিন্তা সবার মাথায় রাখা উচিত।
ট্রেন্ড ফলো করুন
স্টকগুলিতে বিনিয়োগ করার সময় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম। ট্রেন্ড এর বিরুদ্ধে যান না। কোনও স্টক যদি খারাপভাবে পারফর্ম করে তবে তা কিনবেন না। মনে রাখবেন আপনি জুয়া খেলছেন না, বিনিয়োগ করছেন। পরিবর্তে, খারাপ সময় পারফর্মিং স্টকগুলি তারা সময়ের সাথে ঠিক হয় কিনা তা লক্ষ্য রাখুন। যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে তোদের উন্নতির লক্ষণ দেখায় তবে আপনি সেগুলিতে বিনিয়োগ করার জন্যে বিবেচনা করতে পারেন।
পরিশেষে, সফল বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য আপনাকে এই সাধারণ অভ্যাসগুলি গড়ে তুলতে হবে। আপনার জন্যে শুভকামনা রইল!
টিপ – আপনি যদি অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের মতো বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে ‘The Warren Buffett Portfolio’ ও ‘The I ntelligent Investor’ বই দুটি পড়ে নিন ।