আপনি কি আপনার অর্থনৈতিক বা আর্থিক লক্ষ্য গুলো নির্ধারণ করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছেন? এই আর্টিকেলে আমরা পাঁচ ধাপে কিভাবে আপনি আপনার আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন সেই বিষয়ে আলোচনা করব।
এপর্যন্ত অন্তত অনেকবারই আপনি শুনেছেন যে আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে তারা জীবনের প্রত্যেকটি পদে পদে আপনাকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু কিভাবে আমরা বুঝতে পারবো যে আমার জন্য কোন ধরনের আর্থিক লক্ষ্য ভালো হবে ? কারও লক্ষ্য থাকে বাড়ি-গাড়ি করা কারো লক্ষ্য থাকে নিজের ব্যবসা কে অনেক বড় করা। আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তাহলে আপনার জন্য আমরা পাঁচটি ধাপে কিভাবে আপনি আপনার আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন সেই বিষয়ে আলোচনা করছি:
# ১ আপনার লক্ষ্য কি অর্থের সাথে সম্পর্কিত?
আপনার জীবনের লক্ষ্য গুলোর হয়তো অনেক বড় একটা লিস্ট থাকতে পারে, কিন্তু প্রথমেই একটু দেখে করে নিন যে সেগুলো কি টাকার সাথে সম্পৃক্ত কিনা। যেমন ধরুন আপনি যদি চিন্তা করেন যে আপনি ৪০ বছর বয়সের আগেই আপনার ব্যবসা শুরু করবেন। এটা অবশ্যই আপনার একটা ইচ্ছা বা লক্ষ্য এবং একই সাথে এই লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে আপনার টাকার দরকার হবে। আপনার শুধুমাত্র ব্যবসার মূলধন-ই দরকার হবে না, একই সাথে আপনার অতিরিক্তকিছু টাকা দরকার হবে। কারণ প্রথম দিকে আপনার যখন এই ব্যবসা থেকে তেমন কোনো আয় থাকবেনা তখন আপনার এই অতিরিক্ত টাকা আপনাকে প্রতিদিনের ব্যয় পূরণ করতে অর্থের যোগান দিবে ।
# ২ আপনার লক্ষ্য পূরণের জন্যে কত টাকার দরকার?
কোনও লক্ষ্যের জন্য আপনার কত টাকার দরকার হবে তা সবসময় নির্ধারণ করা তত সহজ না। উদাহরণস্বরূপ, গাড়ি বা বাড়ির জন্য আপনার কত টাকার দরকার হবে তা অনুমান করা এতটা কঠিন নয়। এটি এমন এক ব্যয় যা আপনি ইন্টারনেটে প্রচুর আর্থিক ক্যালকুলেটরগুলির সাহায্য নিয়ে দ্রুত বের করতে পারেন।
আবার অন্যদিকে, আপনার অবসরের জন্য কতটা তহবিল আপনার জমা করা উচিৎ, আপনার সন্তানের বিবাহের জন্য কত টাকা লাগবে, কিংবা সন্তানের সমগ্র শিক্ষার জন্য আপনার কত টাকা প্রয়োজন হবে তা নির্ণয় করা একেবারেই সহজ না।
এই লক্ষ্যগুলির জন্য আপনার কত টাকা দরকার তা বের করতে গেলে, আপনাকে মূল্যস্ফীতি, আপনার ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, বিনিয়োগের উপর বিভিন্ন হারের পাশাপাশি টাকা জমানোর আর্থিক সক্ষমতা মতো বিষয়গুলিতে বিবেচনা করতে হবে।
আপনি প্রয়োজনে একজন আর্থিক উপদেষ্টার সাহায্য নিন এবং তিনি আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন যে আপনার অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার মোটামুটি কত টাকার প্রয়োজন হতে পারে।
আপনার যে লক্ষ্য গুলো আছে সে গুলোকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করে নিন। যেই লক্ষ্য গুলো অর্জন করতে আপনার ৪-৫ বছর টাকা জমাতে হবে, সেগুলো মোটামুটি ছোট লক্ষ্য। আর যেসব লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে আপনার এর চেয়ে বেশি সময় ধরে টাকা জমাতে হবে সেগুলো কে আপনি বড় লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করুন।
# ৩ আপনার কখন অর্থ দরকার?
আপনি যখন আপনার আর্থিক লক্ষণ গুলো ঠিক করে ফেললেন তার পরবর্তী কাজ হচ্ছে এই আর্থিক লক্ষ্য গুলো পূরণ করার জন্য এগিয়ে যাওয়া। এই সময় আপনার বের করতে হবে যে আপনার কতদিন পরে বা কত বছর পরে আপনার টাকাটা দরকার হবে। আপনার যদি অল্প টাকার প্রয়োজন হয় যেমন হচ্ছে গিয়ে বাড়ি গাড়ি মেরামত করা, সে ক্ষেত্রে আপনি অল্প কিছুদিন টাকা জমালে সেই পরিমাণ অর্থ আপনি জোগাড় করতে পারবে। আপনার যদি অনেক বড় হয় তখন আপনাকে অনেকদিন ধরে বা কয়েক বছর ধরেই টাকাটা জমাতে হবে। যখন আপনার কয়েক বছর টাকা দরকার হবে তখন অবশ্যই মুদ্রাস্ফীতির কথা মাথায় রেখে সঞ্চয় পরিকল্পনা করা উচিৎ ।
# ৪ আপনি প্রয়োজনীয় সঞ্চয় করতে পারেন?
কিছু আর্থিক লক্ষ্যের জন্য সঞ্চয় করা নিয়ে চিন্তার অবকাশ নেই। উদাহরণস্বরূপ, আপনার অবসর ফান্ড বা আপনার সন্তানের শিক্ষার জন্য সঞ্চয় করা। এই লক্ষ্যগুলি এমন যার সাথে আপনার আপস করা উচিৎ নয়। আপনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একইভাবে কাজ করতে পারবেন না বা আপনার সন্তানের শিক্ষার জন্য কোনও পরিবারের সদস্যের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া আপনার জন্য কোন সম্মানজনক সমাধানঃ না। সুতরাং আপনার অন্য যে লক্ষ্য গুলো আছে সেই লক্ষ্য গুলো আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা যাচাই করুন। এবং ঠিক করে দেখুন যে কোন লক্ষ্য গুলো আপনার পক্ষে অর্জন করা সম্ভব। তবে অবশ্যই মাথায় রাখবেন যে আপনার যে আগে অবসর বা সন্তানের লেখাপড়ার মত অপরিহার্য লক্ষ্য গুলো যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়।
যদি কোনও আর্থিক লক্ষ্য আপনার মূল্যবোধ এবং আকাঙ্ক্ষার সাথে সম্পৃক্ত। তবে আপনার সেই লক্ষ্য গুলার থেকে কোনটিকে অগ্রাধিকার দিবেন তা ঠিক করে নিন। তবে একটা ব্যাপার আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনি যদি আপনার আর্থিক লক্ষ্যগুলো সময়মতো অর্জন করতে না পারে তাহলে আপনার সঞ্চয় ঠিকমতো হচ্ছে না।
# ৫ একটি বাজেট তৈরি করুন এবং বিনিয়োগ করুন:
এমন একটি বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরি করুন যা আপনাকে আপনার লক্ষ্যের আরও কাছাকাছি যেতে সহায়তা করে। আপনি নিশ্চিত করুন যে আপনার যে বাজেট আছে তা আপনি শক্ত হাতে সামলাতে পারবেন এবং আপনার যদি কোন অপ্রত্যাশিত ব্যয় থাকে তাও যেন বাজেটের বাইরে না যায়। আপনি যখন নিশ্চিত হবেন যে একটি নির্দিষ্ট অর্থ আর্থিক লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আপনার কত টাকা প্রয়োজন, একটু যাচাই করে দেখবেন যে আপনার বিনিয়োগ কোনভাবে আপনাকে এই লক্ষ্য অর্জনে সময় বাঁচাতে পারে কিনা। ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড এবং ফিক্সড ডিপোজিটের মতো যথাক্রমে ঝুঁকিপ্রবণ এবং প্রথাগত বিনিয়োগের সংমিশ্রণে বিনিয়োগ করা ভাল। ইক্যুইটি, এমন সম্পদ যা হিসাবে ১০% -১৩% গড়ে রিটার্ন দেয় যা মুদ্রাস্ফীতি থেকে বেশি। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আপনাকে একটা সময় পরে অনেক পরিমান অর্থ দিবে।
আপনি একবার এই পথে চলে আসলে আপনার সঞ্চয়ের অগ্রগতি এবং বাজেট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার সঞ্চয়গুলি যে পরিমাণে বাড়ছে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে প্রতি মাসে যে কোনও উচ্চ-সুদ দেয়া সঞ্চয়ই অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলুন।