আপনি যখন আপনার ভবিষ্যৎ খরচ, আপৎকালীন খরচ যখন চাকরি থাকবে না, সম্ভাব্য চিকিৎসার খরচ মোটামুটি নির্ণয় করতে পারবেন তখন আলাদা করে প্রতিনিয়ত ও আপনার এইসব খরচের জন্য টাকা জমানোর উচিত। যদি সম্ভব হয় প্রতি তিন মাস পর পর এবং তার থেকেও ভালো হয় যদি প্রত্যেক মাসে আপনি আলাদা করে টাকা সরিয়ে রাখতে পারেন।
এত বড় অংক দেখে কি মাথা ঘুরাচ্ছে? ছোটবেলায় কি অংক করতে আপনার মেজাজ খারাপ হত? অথবা আপনি কি এরকম চিন্তা করে দিন কাটাচ্ছেন যে প্রত্যেকটা দিন যেভাবে সমস্যা নিয়ে আসবে সে ভাবে সমাধান করব বা আজকের দিনটা চলে যাক, এরপর যখন সমস্যা হবে তখন দেখে নেব?
এটা সত্যি যে সবসময় সমস্যা বলে কয়ে আসে না। তাই প্রস্তুত থাকার পরও অনেক সমস্যা নতুন করে হাজির হয়। কিন্তু আপনি যদি নিজের উপরে আত্মবিশ্বাসী থাকেন তবুও আপনার ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় নেয়া উচিত।
জীবনে বেঁচে থাকার জন্য টাকার প্রয়োজন। আমরা সব সময় আমাদের যেকোন প্রয়োজনে হোক তা অতীব প্রয়োজনীয় অথবা অল্প প্রয়োজনীয়, হোক সেটা নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন জিনিস অথবা কোনও বিলাসবহুল সামগ্রী, সবকিছু কিনতেই টাকা দরকার হয়। কোনদিন যদি আমরা ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করি যে হাতে কোনো টাকা নেই তাহলে দিনটি কেমন যাবে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
সব টাকা একসাথে খুলে ফেলার দুঃস্বপ্নটা আপাতত বাদ দিন, তার থেকে চিন্তা করুন আপনার যদি কখনো চাকরি চলে যায়, অথবা কোনো নিকটাত্মীয়ের জন্য গুরুতর চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তখন কি করবেন। এইসব ভবিষ্যৎ কঠিন সময়ের জন্যই আসলে আগে থেকে বাজেট করা প্রয়োজন।
আপনি যখন বাজেটের জন্য পরিকল্পনা করবেন তখন আপনি আপনার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকবেন এবং প্রয়োজনে কিভাবে টাকা খরচ করতে পারবেন সেই বিষয়ে আপনি অবগত থাকবেন। তাহলে কিভাবে আপনি বিপদের সময় হাতে প্রয়োজনীয় টাকা রাখার জন্য পরিকল্পনা করতে পারেন?
আবশ্যিক ব্যয় বনাম পরিবর্তনশীল ব্যয়
প্রথম ধাপ: আপনি যদি সবসময় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করে নগদ পরিশোধ করে কেনাকাটা করেন তাহলে আপনার প্রথমে এক সপ্তাহের খরচ হিসাব করুন তারপরে চার দিয়ে গুণ করে মাসিক খরচ হিসাব করে ফেলুন।
আপনি যদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হিসেব করে রাখতে চান তাহলে আপনার ফরজ গুলো কে কয়েকটি বিভাগে বিভক্ত করুন যেমন খাওয়া-দাওয়ার খরচ, যাতায়াত খরচ, কেনাকাটার খরচ, বিনোদনের খরচ ইত্যাদি। আরাফাত করতে চাইলে তাও পড়তে পারেন যেমন খাওয়া-দাওয়ার খরচ কে বাজারের খরচ এবং বাইরে থেকে কিনে খাওয়ার খরচ কে আলাদা করতে পারেন।
আপনার খরচ কে যদি বিস্তারিতভাবে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে থাকেন তাহলে আপনি দেখতে পারবেন কোন জায়গায় আপনি কিছুটা বেশি খরচ করছেন। তারপরে আপনার খরচ গুলোকে আপনি দুই ভাগে ভাগ করে নিন একভাগ হচ্ছে যে খরচগুলো আপনি বাদ দিতে পারবেন না বা নিত্যপ্রয়োজনীয়/আবশ্যিক ব্যয়, অন্য ভাগে যে খরচ গুলোকে আপনি চাইলে কমাতে পারবেন বা পরিবর্তনশীল ব্যয়।
উদাহরণ হিসেবে: আবশ্যিক ব্যয় হিসাবে আপনার ঋণ, ইউটিলিটি বিল, বিভিন্ন সার্ভিস যা প্রত্যেক মাসে আপনি নিয়ে থাকেন এবং পরিবর্তনশীল খরচ যেমন বাইরে খাওয়া দাওয়া, বিনোদন জামা কাপড় কেনা ইত্যাদি।
ভবিষ্যৎ খরচের পরিকল্পনা:
দ্বিতীয় ধাপঃ ভবিষ্যৎ খরচের পরিকল্পনা করে ফেলুন। বাসার খরচ, যাতায়াত, খাবার-দাবার, বিনোদন এবং অন্যান্য এই পাঁচ ভাগে আপনার এক মাসে যে পরিমাণ খরচ হতে পারে তা তালিকা করে ফেলুন। এবং সেই পরিমাণ টাকা আলাদা করে রাখুন।
অন্যান্য খরচ বলতে, আপনার অনেকদিনের শখ এর কোন জিনিস থাকতে পারে যা আপনি কেনার জন্য একটু একটু করে টাকা জমিয়েছেন,অথবা কোন প্রফেশনাল ডেভলপার জন্য কোনও একটি কোর্সও হতে পারে।
আকস্মিক তহবিল-১
তৃতীয় ধাপঃ এরকম একটি অবস্থা চিন্তা করুন হঠাৎ করে আপনার চাকরী চলে যেতে পারে তখন আপনার কত টাকা দরকার হবে পরবর্তী চাকরি জোগাড় করার আগ পর্যন্ত। এইসব করতে গেলে আপনি আপনার মাসিক খরচের যে পরিমাণ টাকার দরকার হয় তা 6 দিয়ে গুণ করে অংকটি সহজে বের করে নিতে পারবেন। ছয় মাসের মাসিক খরচের টাকা যদি আপনি আলাদা করে আকস্মিক তহবিল এর জন্য জমা করেন তাহলে হঠাৎ আপনার চাকরি চলে গেলে সেই খরচ আপনার মাথার উপরে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না।
আকস্মিক তহবিল-২
চতুর্থ ধাপঃ চিন্তা করুন যে হঠাৎ চিকিৎসার জন্য যদি আপনার ও আপনার পরিবারের কারও টাকার দরকার হয় তখন কি পরিমান টাকা প্রাথমিকভাবে লাগতে পারে। সেই টাকা আলাদা করে কোথাও গচ্ছিত রাখুন যা সহজেই আপনি চুলে ব্যবহার করতে পারবেন।
আপনি যখন আপনার আকস্মিক তহবিল এর ক্ষেত্রগুলো নির্ধারণ করতে পেরেছেন এবং কী পরিমান টাকা আপনার দরকার হতে পারে যদি আপনার চাকরি চলে যায় অথবা হঠাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তারপরে আপনার আস্তে আস্তে তহবিল গুলোতে টাকা জমা করা উচিত। আপনি চাইলে প্রত্যেকদিন মাসে টাকা জমা করতে পারেন অথবা যদি প্রত্যেক মাসে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তহবিল গুলোর জন্য জমাতে থাকেন তাহলে আপনার জন্য আরো ভালো।
এই শেষ ধাপ এর আগে আপনাকে প্রত্যেক মাসে আসলে ঠিক করে নিতে হবে যে কত টাকা আপনার জমা করতে হবে।
আপনি যদি চিন্তা করেন যে কিভাবে আপনি এই টাকাগুলি আলাদা করে সরিয়ে রাখবেন,কোন বিপদের সময় কিভাবে ব্যবহার করবেন তাহলে আপনার জন্য আমরা উপায় বলে দিচ্ছি।
একটি আলাদা একাউন্ট করুন যাতে আপনি যে পরিমান টাকা জমা রাখবেন তার উপরে ভালো একটি সুদের হার পান এবং প্রত্যেক মাসে আপনার তৃতীয় এবং চতুর্থ ধাপে জমা করার কথা সেগুলো অটোমেটিক নতুন একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিন।
মনে রাখবেন এই একাউন্টের টাকাআপনার সাধারন খরচের হিসেবে কখনোই যেন না আসে। এবং এই টাকাগুলো সহজে উঠিয়ে নেয়া যায় এমন কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন যাতে জরুরী প্রয়োজনে আপনি সহজেই টাকাগুলো তুলে নিতে পারবেন।