ব্যক্তিগত লোন সাধারণত আপনাকে আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয়তা মেটানো জন্য টাকা ধার দেয়। যেমন, আপনি আপনার পরিবারে প্রমোদ ভ্রমণ, বাড়ির সংস্কার, চিকিৎসা বা বিবাহের জন্যও এই অর্থ ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু ব্যক্তিগত ঋণ একটা নির্দিষ্ট প্রাসঙ্গিক উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়, তাই এটি আপনার সমস্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছা পূরণের জন্য আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ব্যক্তিগত ঋন পাওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে এই ঋণ কিভাবে কাজ (প্রাসঙ্গিক কি কাজে লাগাবেন সেটা ঠিক করুন) করে এবং এর আর কি কি বিকল্প আছে।
হোম লোন ও কার লোনের চেয়ে পার্সোনাল লোন(ব্যক্তিগত ঋণ) সাধারণত অনিরাপদ। যেমনঃ এই লোনের কোনো কোল্যাটেরাল(জামানত) থাকে না যেটা কিনা লোন ডিফল্ট হইলে বা পরিশোধ না করলে সিকিউরিটি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। যেহেতু এই ঋন এর বিপরীতে কোনো কোল্যাটেরাল থাকে না তাই ঋনদাতার জন্য এটা একটা বড় রিস্ক। আর এই কারনেই তারা সাধারণত নিরাপদ লোন (যেমন হোম লোন বা কার লোন) এর চেয়ে পার্সোনাল লোনে উচ্চ মাত্রার সুদের হার গ্রহন করে থাকে।
পার্সোনাল লোনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুঃ
পার্সোনাল লোন সাধারণত বেতনভুক্ত কর্মচারীদের জন্য ডিজাইন করা। এই অনিরাপদ ঋন একক ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ী ও স্বনির্ভর পেশাজীবির জন্যও আছে এমএসএমই(MSME)বা এসএমই(SME) নামে। তবে এর পলিসি ও বৈশিষ্ট্য পার্সোনাল লোনের থেকে কিছুটা আলাদা। আপনি যখন কোনো পার্সোনাল লোনের জন্য আবেদন করবেন তখন কিছু পয়েন্ট জানা থাকা জরুরি। এই জরুরি পয়েন্ট গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
১) ঋনের পরিমান ও মেয়াদঃ যদিও সকল ঋনদাতার নিজস্ব গাইডলাইন আছে এবং সেগুলো অনুসরণ করেই ঋন প্রদান করে। সাধারণত এই পার্সোনাল লোনের পরিমান আপনার ইনকাম ও ঋন পরিশোধের সক্ষমতার ভিত্তিতে ৫০ হাজার থেকে ১৫ লক্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এর সময়সীমা ১২ থেকে ৬০ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে।
২) যোগ্যতাঃ আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম 21 বছর হতে হবে এবং অবশ্যই চাকুরীজীবি হতে হবে। আর ন্যূনতম আয়ের মানদণ্ডটি আপনি এখন কোন স্থানে রয়েছেন তার উপর নির্ভর করে। সাধারণত মেট্রোসিটি (যেমন ঢাকা, চিটাগং, সিলেট, রাজশাহী খুলনা) মধ্যে হলে মাসিক বেতনের গড় নুন্যতম ১৫০০০-২০০০০ হতে হবে। অন্যথায় মাসিক নুন্যতম ১০,০০০- থেকে ১৫০০০ হলেই চলবে।
আপনি যদি আপনার লোন প্রাপ্তির সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে বেশি পরিমান লোনের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে পরিবারের অন্য সদস্য যেমন বাবা-মা বা স্ত্রীর উপার্জন একসাথে করে দেখাতে পারেন। ঋনদাতা অবশ্য ৩-৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়ে আপনার বেতন নিয়মিত হচ্ছে কিনা এবং আপনার একাউন্টের ব্যাংকিং পরিসংখ্যান গুলো মূল্যায়ন করে।
৩) প্রসেসিংয়ের সময়ঃ যদি সমস্ত কিছু ঠিক থাকে তাহলে একবার আপনি আপনার আবেদন ফর্ম এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরে, ২-৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার লোনের অনুমোদনের আশা করতে পারেন। সমস্ত লোনের অনুমোদন একমাত্র ব্যাংকের বিবেচনার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। ঋনদাতা সাধারণত পার্সোনাল ঋণ বিতরণের জন্য সর্বোচ্চ ৫-১০ কার্যদিবস গ্রহণ করে থাকেন।
৪) সুদের হারঃ ব্যক্তিগত ঋণে সুদের হার ৯% এবং ১২% পর্যন্ত হয়ে থাকে। গ্রাহকের জন্য প্রযোজ্য নির্দিষ্ট সুদের হার, সাধারণত অফার স্কিম এর উপর ভিত্তি করে, তার চাকুরীর ধরন এবং জায়গা বিবেচনায় হয়। ব্যাংক তাদের নিজস্ব বিবেচনার ভিত্তিতে সময়ে সময়ে সুদের হার এবং প্রক্রিয়াকরণ ফি সংশোধন করার অধিকার সংরক্ষণ করে।
৫) ঋণ পরিশোধের হিস্টোরিঃ ব্যক্তিগত লোন মূলত একজনের আর্থিক অবস্থা এবং তার ক্রেডিট মূল্যায়ন(যেমনঃ ভালো লেনদেন এর পরিসংখ্যান) এর ভিত্তিতে দেওয়া হয়। আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন আপনার বেতন স্লিপ এবং আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট মাধ্যমে করা যেতে পারে। ভালো লেনদেন আপনার ক্রেডিট হিস্টোরি এবং রিপোর্ট থেকে যাচাই করা হয়।
৬) কাগজপ্রত্রাদী (ডকুমেন্টেশন)ঃ ব্যক্তিগত ঋণ যেহেতু সুরক্ষিত নয়, তাই এগুলি ন্যূনতম কাগজপত্র নিয়েই সাধারণত প্রক্রিয়া করা হয়। ব্যক্তিগত ঋণের জন্য ডকুমেন্টেশন বিভিন্ন ব্যাংকের চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এই প্রয়োজনীয়তাগুলো আপনার পেশা, আয় এবং ঋণের চাহিদার উপর নির্ভর করে। নুন্যতম মূল যে কাগজপত্রাদীর প্রয়োজন সেগুলো নিম্নরূপ:
এগুলো ছাড়াও ব্যাংক অন্য একাধিক ডকুমেন্ট চাওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে।
৭) ফোরক্লোজার: ব্যাংক ফোরক্লোজার প্রক্রিয়া শুরুর আগেই তাদের নিশ্চিত করুন যে আপনি আপনার সমস্ত বকেয়া টাকা পরিশোধ করবেন বা করতে পারবেন। সকল ব্যাংকের নিজস্ব একটা ফরক্লোজার নীতি এবং চার্জ রয়েছে।
স্বল্প মেয়াদী আর্থিক সঙ্কট থেকে বাঁচতে পার্সোনাল লোন খুবই জনপ্রিয় একটা হাতিয়ার। যেহেতু কোনো সুরক্ষা জামানত (collateral security) ছাড়া এবং নুন্যতম কাগজপত্রের মাধ্যমেই যে কেউ এই লোন পেতে পারে তাই এটি সঙ্কটকালীন সময়ে খুব সাহায্য করে।