আপনি কি নতুন চাকরি পেয়ে এই প্রথম ক্রেডিট কার্ড করছেন কিংবা কোনও পরিস্থিতির আপনার কারণে বেতন কমে গিয়েছে? এমবসড নম্বরযুক্ত প্লাস্টিকের সুন্দর টুকরোগুলি দেখতে খুব ভাল লাগে, তাই না? এগুলো, আপনার মানিব্যাগেও বেশ মানায়। তবে, এগুলি ব্যবহার করার সময় আপনাকে কয়েকটি জিনিস মনে রাখতে হবে।
যদি এটি আপনার প্রথম চাকরি হয় অথবা আপনি বেশি উপার্জন না করেন, তবে আপনাকে ঋণের দুনিয়ায় খুব সাবধানতার সাথে পা দিতে হবে। এটি কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। তবে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলে আপনার জন্যে ব্যাপারটা সহজ হয়ে যাবে। আপনাকে সাহায্য করতেই আমরা আছি। মনে রাখবেন যে এই ছোট্ট প্লাস্টিকের কার্ড আপনার ক্রেডিট স্কোর (সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ) তৈরিতে আশ্চর্যজনক ভাবে কাজ করবে। যদিও বাংলাদেশে এখনও ক্রেডিট স্কোরের ব্যাপারটা নেই। আপনার ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার আপনাকে ভবিষ্যতে আরও বড় ঋণ (গাড়ি ঋণ, বাড়ি ঋণ) পাবার ক্ষেত্রে ভাল অবস্থানে রাখতে পারে। শুধু নিম্নলিখিত পয়েন্ট গুলি মনে রাখবেন:
সীমিত আকারে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন
আপনার বেতন যদি কম হয় তাহলে আপনার কার্ডে ঋণের সীমাও কম থাকবে। এই ক্ষেত্রে, ক্রেডিট লিমিটের পুরোটা ব্যবহার না করার লোভ সামলানো কঠিন। না! আপনার ক্রেডিট সীমা ৩০% এর বেশি ব্যবহার করবেন না। এটি যদিও পরীক্ষিত তথ্য নয় যে আপনার কার্ডের ঋণের সীমা ৩০% ছাড়িয়ে গেলে তা ক্রেডিট স্কোরকে প্রভাবিত করবে। তবে এটি ঋণের আপনাকে অনেক বেশি নির্ভরশীল করে ফেলবে। আপনি হয়ত মনে করতে পারেন যতক্ষণ আপনি সীমার মধ্যে আছেন ততক্ষণ কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আসলেই তা নয়। আপনার ঋণ বেড়ে গেলে তা একবারে পুরোটা শোধ করা কঠিন হয়ে যাবে। ক্রেডিট কার্ডে ছোট্ট অংকের কেনাকাটা করুন এবং নির্ধারিত তারিখের আগেই পুরো বিল পরিশোধ করুন। আরও ভাল হয়, কেবল জরুরী পরিস্থিতিতে এই ছোট অংকের কেনাকাটা গুলি করেন। যতটা সম্ভব নগদ টাকা ব্যবহার করুন।
আপনার নির্ধারিত তারিখের গুরুত্ব জানুন
আমরা ধরে নিচ্ছি যে ক্রেডিট কার্ডগুলি কীভাবে কাজ করে তা আপনি জানেন। আপনি যদি এখনও আপনার কোনও ক্রেডিট কার্ড না থাকে এবং আবেদন ও না করে থাকেন তাহলে আপনি স্পেশাল। আপনি আগে থেকে সতর্ক না হলে সম্ভবত, আপনি এটি ব্যবহার করতে গেলে খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন। শুরুতে, আমরা আপনাকে নির্ধারিত তারিখ (Due Date)-এর গুরুত্ব বুঝতে চাই। এই গুরুত্বপূর্ণ তারিখটি প্রতি মাসে আপনার বিবৃতিতে (statement ) উল্ল্যেখ করা থাকে। আপনাকে প্রতি মাসে এই দিনটির মধ্যে আপনার কার্ডে কোনও বকেয়া পাওনা থাকলে তা দিয়ে দিতে হবে। যদিও বেশির ভাগ মানুষ সর্বনিম্ন বকেয়া জমা দেয় কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ বকেয়া অর্থ জমা দেয়ার পক্ষে।
পেমেন্ট মিস করলে কি সমস্যা হবে? পেমেন্ট মিস করা কখনই ভাল হবে না! একটি পেমেন্ট মিস হলেও আপনার ক্রেডিট রিপোর্টে প্রদর্শিত হবে (এবং ভাল উপায়ে নয়)। আপনি যখন নিজের ক্যারিয়ারে অগ্রসর হন এবং আরও বেশি টাকা উপার্জন শুরু করবেন, আপনি আরও বড় ঋণ নিতে চাইবেন। এই নির্ধারিত তারিখ এর মধ্যে তাই বকেয়া টাকা দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে আপনি যত ইচ্ছা রিমাইন্ডার সেট করুন তবে কোনও ভাবেই পেমেন্ট মিস করবেন না। এছাড়াও, আপনি আরও উপার্জন শুরু করার সাথে সাথে আপনি সীমা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করতে পারেন। আপনি যদি পেমেন্ট মিস করে থাকেন এবং আপগ্রেড চান, সেই ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক কি উত্তর দিবে তা আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।
হঠাৎ কেনাকাটা? অন্তত ক্রেডিট কার্ডে না!
যদি আপনার ক্রেডিট কার্ডের সীমা কম থাকে তখন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে হঠাৎ কেনাকাটা করা কোনও পাপের চেয়ে কম কিছু নয়। আপনার অজুহাত কি? আপনি কিভাবে পরিশোধ করতে যাচ্ছেন? আপনি এখন বোকামি করে কেনাকাটা করলে পরে অনেক দিন ধরে টাকা শোধ করতে থাকবেন। এটাকে আপনি পরে বোকামির দন্ড বা যা ইচ্ছে তা বলতে পারেন। এই ধরণের কেনাকাটা ঠিক আছে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি পুরো বকেয়া পরে দিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু এভাবে ছোট ছোট অংকের কেনাকাটার টাকা সময়মত পরিশোধ না করতে থাকলে এক সময় বড় অংকে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন একবারে পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। অনেক লোক ক্যারিয়ারের শুরুতে বেপরোয়া কেনাকাটা করে। তারা কি করেছে? তারা ডান-বাম না ভেবেই কার্ড সোয়াইপ করে তাদের স্বল্প বেতনের জীবন যাত্রার ভয়ানক ক্ষতি করেছে। আশাকরি আপনি এই ভুল করবেন না।
রিওয়ার্ড পয়েন্টের জন্যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন না!
পুরষ্কার/রিওয়ার্ড পয়েন্টগুলি সত্যিই দুর্দান্ত। আসলে এটি ক্রেডিট কার্ডের অন্যতম সেরা সুবিধা। আপনি নিজের কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করবেন, আপনি পয়েন্ট পাবেন এবং তারপরে আপনি সেই পয়েন্ট দিয়ে আরও কিছু কেনাকাটা করবেন। শুনতে খুবই ভাল শুনায়, তাই না? সত্যি কথা বলতে গেলে এই রিওয়ার্ড পয়েন্টের সিস্টেম কেবলমাত্র ক্রেডিট সীমা বেশি তাদের জন্য খুব ভাল কাজ করে। আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকেন তবে আপনাকে আপনার ক্রেডিট সীমা ৩০% এর বেশি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিচ্ছি।
ধরে নিই আপনার ক্রেডিট লিমিট ৩০,০০০ টাকা তার মানে হচ্ছে গিয়ে আপনার ইনকাম অনেক কম এখন আপনি যদি ১০ হাজার টাকা খরচ করেন তারমানে আপনি খুবই কম পয়েন্ট পাবেন। এবং এই পয়েন্ট অলমোস্ট কিছুই করতে পারবেন না। এখন আপনি যদি বেশি পয়েন্টের জন্য বেশি টাকা খরচ করতে যান তাহলে কি হবে? আপনি পুরো টাকা হয়তোবা কখনো শোধ করতে পারবেন না। আপনি নিজের জন্যে খোঁড়া গর্তে নিজেই নিজে পড়ে যাবেন। তাই না?
তার থেকে কয়েকটা দিন অপেক্ষা করেন। আপনার টাকা-পয়সা আয় একটু বাড়ুক। আপনার আয় বাড়লে আপনার ক্রেডিট কার্ডের লিমিট একটু বাড়িয়ে নিন। তারপর নাহয় কেনাকাটা করবেন। আপাতত আপনার এই অধিক কেনাকাটার সভাব কে বাদ দিয়ে দিন।
জেনে রাখা ভাল
সব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের হিসাব কিন্তু একরকম না. আপনি আগে জেনে নিন যে আপনি যে কার্ড নিচ্ছেন সেই কার্ডে কতটা আপনি সুদ দিচ্ছেন। মূলত যেসব ক্রেডিট কার্ড লিমিট অনেক কম থাকে, তাদের সুদ বেশি থাকে না। কিন্তু আপনি যদি গোল্ড কার্ড বা প্লাটিনাম কার্ড নিতে চান তাহলে আপনাকে অনেক সময় অনেক বেশি সুদের কার্ড নিতে হয়। সেই ক্ষেত্রে আপনি যে ব্যাংকের সাথে কথা বলছেন তাদের ছাড়াও অন্য ব্যাংকের যে অপশন গুলো আছে সেগুলো যাচাই করে করে দেখবেন। এমনও হতে পারে যে অন্য ব্যাংকে আপনি একই সুবিধা সহ কার্ড কম সুদে নিতে পারছেন।
এছাড়াও ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফির কথা ভুলে যাবেন না। কারণ প্রতিটি টাকা আপনার কাছে মূল্যবান। অন্তত যখন আপনার আয়-রোজগার কম তখন নিজের মানিব্যাগ চিকন করে ফেলার কোন দরকার নেই। পরবর্তীতে যখন সময় আসবে, আপনার আয় রোজগার বাড়বে তখন যে কোন ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে কাজ করতে হবে আপনার আয় রোজগার বাড়াতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত অল্প খরচ করে অপেক্ষা করুন। ভালো থাকবেন।
তো, এই আর্টিকেল থেকে আমরা কী শিখলাম? আমরা শিখেছি যে টাকা পয়সা খরচ করে বোকা হতে নেই। আমরা আরও জেনেছি যে ক্রেডিট কার্ড আসলে কোন খেলনা না। যে আমার যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবে কার্ড সোয়াইপ করে আমি টাকা খরচ করব। আপনাদের জন্য আমরা টাকা সেন্টার থেকে এরকম টাকা-পয়সা বিষয়ক অনেক এডভাইস নিয়ে আসছি। আমাদের সাথে থাকুন, আমাদের কথাগুলো ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।