যেকোনো পিতামাতার জন্য সন্তানের জন্য অত্যন্ত আনন্দের একটি ব্যাপার। কিন্তু সাথে সাথে মাথায় রাখতে হবে যে সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য পিতা-মাতার উপরে অনেক দায়িত্ব এবং খরচাও চলে আসে। দিন দিন যেভাবে সবকিছুর খরচ বাড়ছে, উচ্চশিক্ষার খরচ একই হারে বেড়েই চলেছে। সেজন্য সন্তানের পড়াশোনার খরচ সামাল দিতে আগে থেকে সঞ্চয় করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তারপরও অনেক সময় অনেক অসুবিধার কারণে আমরা আগে থেকে সঞ্চয় করতে পারিনা, যখন সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য টাকার প্রয়োজন হয় তখন আমাদের হাতে প্রয়োজনীয় টাকা থাকে না।
আপনার সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য খরচ আগের থেকে জমিয়ে রাখা আপনার আর্থিক পরিকল্পনায় থাকা উচিত। তারপরও আপনি যদি আগের থেকে চিন্তা না করে থাকেন, তাহলে যা যা করবেন এবং যা এড়িয়ে চলবেন সেই বিষয়ে কয়েকটি পয়েন্ট এ আর্টিকেলে আলোচনা করব।
যা যা করতে পারেন:
কোন কোর্সে ভর্তি হওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তা করে নিন
শুধুমাত্র একটি ডিগ্রী থাকলেই ভাল চাকরির নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে এমন একটি বেছে নিতে আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের পরিকল্পনার জন্য সাহায্য করবে। যদিও আমাদের সবার ধারণা যে স্টেম এডুকেশন ভালো বেতনের চাকরি দেয়, কিন্তু সবার জন্য তা সহজ হয় না। অন্যদিকে সোশ্যাল সাইন্স পড়াশোনা করেও অনেকে ভালো চাকরি পেয়ে থাকেন। শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। মনে রাখবেন আপনি যে – আপনার সন্তান যে বিষয়ে পড়াশোনা করবেন সেই বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজে তাকে অন্তত ২০ থেকে৩০ বছর চাকরি করতে হবে। তাই যে বিষয় আপনার সন্তানের মোটামুটি ভালো লাগে, এবং ভবিষ্যতে চাকরির সুযোগ আছে, সেই রকম একটি বিষয় নির্বাচন করুন।
ভবিষ্যতে বাস্তব বেতনের প্রত্যাশা রাখুন
অনেকেই চিন্তা করতে পারেন যে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়লে বেশি বেতনে চাকরি পাওয়া যাবে। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই যখন কেউ চাকরি শুরু করে তখন বেতন অনেক বেশি হয় না। সে ক্ষেত্রে সেক্ষেত্রে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, অথবা রাজধানীর বাইরে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে আসা কোন শিক্ষার্থী চাকরি শুরু করলে বেতনের তেমন পার্থক্য হয় না। তাই ঋণ নেয়ার সময় বাস্তবে বেতন যে রকম হতে পারে তা মাথায় রেখে কত টাকা ঋণ নিতে পারবেন তা ঠিক করে নিন।
যা যা এড়িয়ে চলবেন:
ঋণ সুবিধা আছে বলেই কোন কোর্সে ভর্তি হবেন না
অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে আর্থিক প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ থাকে। তখন কোনো ছাত্র বা ছাত্রী যদি চায় তারা সহজে ঋণ নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ঋণের প্রসেসিং অনেক সহজ হয় এবং সুদের হারও কম থাকে। তার মানে এই না যে ঋণ সুবিধা আছে বলে উক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যাবেন। আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান, তার প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রদের চাকরি বাজারে অবস্থান ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
Top-Up ঋণ নিবেন না
অনেকেই স্নাতক শেষ করার পরে চাকরি পান না তখন উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হয়ে যান। তাদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী পূর্বে শিক্ষা ঋণ পরিশোধ না করে উচ্চশিক্ষার জন্য আবার ঋণ নিয়ে থাকেন। এটা খুবই খারাপ অভ্যাস কারণ ঋণের বোঝা তাহলে আরও বেড়ে যাবে। তাই পরবর্তীতে কোনও শিক্ষা ঋণ নেয়ার আগে আগে পূর্বের যে ঋণ আছে তা পুরোপুরি পরিশোধ করুন।
শিক্ষা ঋণ বনাম অবসর পরিকল্পনা
আপনার শিক্ষা ঋণ নিতে গিয়ে যেন অবসর পরিকল্পনায় যেন কোন ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে। আমাদের দেশের অনেক পিতা মাতা সন্তানের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে গিয়ে নিজেদের অবসর পরিকল্পনার কথা ভুলে যান। সব সময় মাথায় রাখবেন যে – আপনার সন্তান হয়তো একটু দেরিতে হলেও চাইলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু আপনি সময় থাকতে অবসর পরিকল্পনা না করলে শেষ জীবনে আর সময় পাবেন না। তাই সন্তানের শিক্ষাঋণের আগে আপনার অবসর পরিকল্পনা কে প্রাধান্য দেয়া উচিত।