আপনি কি চিন্তা করে দেখেছেন যে আপনার আয়-উপার্জন বাড়ার পরও কেন আপনার সঞ্চয় বাড়ছে না ? আপনার ব্যক্তিগত আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে।
আপনার কি মোটা অঙ্কের বেতন পাবার পরও মাসের শেষে টাকা পয়সার টানাটানি হয়? সম্ভাব্য কারণ গুলো জেনে নিন।
আপনি হয়তো অবাক হয়ে ভাবতে পারেন, যে কিভাবে আগে আপনার বেতন কম থাকা সত্ত্বেও আপনি এখনকার চেয়ে বেশি হারে সঞ্চয় করতে পারতেন। এই চিন্তা আপনার একার না। সাধারণ যুক্ত যা বলে- আপনার আয় বাড়ার সাথে সাথে আপনার সঞ্চয়ের পরিমাণ করা উচিত। কিন্তু এই যুক্তির তখনই ঠিকভাবে কাজ করবে যখন আপনি ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে করতে পারবেন।
নিচে কয়েকটি কারণ তুলে ধরলাম, এগুলো হয়তো আপনার মাসের শেষে আর্থিক টানাপড়নের কারণ হতে পারে।
আপনার সামর্থের বাইরে জীবন যাপন করা
যদিও আমাদের সবারই স্বপ্ন বড় থাকা উচিত এবং সময়ের সাথে সাথে উন্নত জীবনযাপনের চেষ্টা করা উচিত, তারপরও এমন যদি এমন যাতে না হয় যে আমরা শুধু সম্পত্তি অর্জনের মধ্যেই বড় স্বপ্ন দেখি। এটা খুবই স্বাভাবিক যে আমাদের আয় বাড়ার সাথে সাথে আমরা উন্নত জীবন যাপন করতে চাই, কিন্তু সাথে সাথে আমাদের আর্থিক ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে।
আপনি দেখতে পারবেন যে আপনার আয় বাড়ার সাথে সাথে আপনার জন্য আরও শক্তিশালী আর্থিক পণ্য ব্যবহার করা ক্ষমতা বেড়ে যাবে। যেমন ব্যাংক আপনাকে আরো বেশি লিমিটেড ক্রেডিট কার্ড দিতে চাইবে। এমন অবস্থায় ব্যয় করার আগে আপনার নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত, এবং দায়িত্বশীল ভাবে এই নতুন আর্থিক সক্ষমতার ব্যবহার করা উচিত।
আপনার হয়তো এখনও অনেক আর্থিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য লোভ হতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন আপনার ক্রেডিট কার্ড দায়িত্বশীল ভাবে ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি বড় বড় খরচ গুলো ক্রেডিট কার্ডে করে থাকেন তাহলে তা ফেরত দেয়া কিন্তু কঠিন হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আপনার সাবধান হতে হবে। আপনার ক্রেডিট সীমার ৩০% – ৪০% এর বেশি ব্যবহার করবেন না। কেন? কারণ, প্রথমত, ক্রেডিট কার্ড সুদের হার অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত, কোন কারণে সময়মত টাকা দিতে না পারলে আপনি আরেক ঝামেলায় পড়বেন। হচ্ছে গেছে আপনার ক্রেডিট লিমিট বেশি হলেও ক্রেডিট কার্ডে ঋণ বাড়াবেন না।
“বিনিয়োগ? শব্দটা শুনতেই বিরক্তি লাগে!”
এটি এযুগের ছেলেমেয়েদের কাছে একটি সাধারণ অনুভূতি। আমাদের চারপাশে অর্থবিত্ত নিয়ে এত বেশি কেলেঙ্কারি চোখে পড়ে যে তরুণদের জন্যে বিনিয়োগের চিন্তা করা বিরক্তিকর হয়ে যায়। সুতরাং, তারা বিনিয়োগ এবং সম্পদ বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে শিখতে মাথা ঘামাতে না।
বিনিয়োগের জগত থেকে দূরে থাকা আপনার সঞ্চয়ের অভ্যাস কে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। দেখুন, অনেকেই চিন্তা করে যে জীবন তো একটাই, এই চিন্তা ভাবনা তে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যখনই টাকা-পয়সার ব্যাপার আসবে, আপনাকে যেমন টাকা জমাতে হবে তেমনিভাবে অর্থ সম্পদ বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে।
ব্যয়ের হিসাব না রাখা
আজকালকার দিনে টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে তার হিসাব রাখা আগের চেয়ে অনেক সহজ। এমনকি আপনি আপনার স্মার্টফোনের মাধ্যমেও এ কাজটি করতে পারেন। আমাদের এত টেকনোলজির সুবিধা থাকার পরেও যখন নিজের ব্যয় হিসাবের ব্যাপার আসে তখন অনেকে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ায়। ব্যক্তিগত অর্থ পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে সাধারণ ভুলগুলির মধ্যে একটি।
যদিও ছোটখাট ব্যয়গুলি যেমন, আইসক্রিম খেয়ে তা নোট করা তুচ্ছ মনে হতে পারে, অভ্যাসগুলো গড়ে না তুললে পরবর্তীতে বড় ব্যয় গুলোর হিসাব রাখতে ভুলে যাবেন। মাস শেষে দেখা যায় এরকম ছোট ছোট ব্যয় যোগ হয়তো বড় একটি আকার ধারণ করে। কিন্তু আপনি যদি হিসাব না রাখেন তাহলে হয়তো বুঝতেই পারবেন না যে এতগুলো টাকা কোথায় খরচ হয়ে গেল।
ছোটখাটো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। যেমন প্রত্যেক সপ্তাহে আপনার ব্যাংক ব্যাঙ্কে কত টাকা আছে তা একবার দেখে নিলেন। মাস শেষে কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে তাই হিসাব করে নিলেন। তাহলে আপনার অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো আপনি একসময় বাদ দিতে পারবেন। কথায় আছে এক টাকা বাঁচানো মানে এক টাকা বেশি আয় করা।