ব্যাংক আপনাকে পার্সোনাল লোন বা হোম লোন হিসেবে কত টাকা দিবে সেটা হিসেব করা যতটা কঠিন মনে হচ্ছে ততটা নয়। এটি আসলে এত সহজ যে আপনি আপনার চার দেয়ালের মধ্যে আরামের বসে এটি গণনা করতে পারেন।
ব্যাংক আপনাকে আপনার মাসিক আয়ের উপর নির্ভর করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লোন আপনাকে অফার করবে। যেহেতু এই লোনটি আপনাকে সমপরিমাণ মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে তাই ব্যাংক আপনার মাসিক উপার্জনের ভিত্তিতে লোনটি হিসেব করবে। তাই ব্যাংক আপনার মাসিক আয়ের হিসাব জানতে চাইবে যে তারা সে অনুসারে আপনার মাসিক কিস্তির পরিমাণ নির্ধারন করতে পারে। প্রত্যেকটি ব্যাংকের নিজস্ব পলিসি অনুসারে সর্বোচ্চ যে কয় বছর আপনি উপার্জন করতে পারবেন তার উপর আপনার লোনের হিসেব হবে। আপনাকে অনুমোদিত লোনের হিসাব আপনার বয়সের উপর নির্ভর, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক সময়ে সময়ে জারি কৃত নির্দেশাবলী অনুযায়ী।
লোন প্রাপ্তির যোগ্যতার হিসেব
আপনি যদি বেতনযুক্ত কর্মচারী হন তবে ব্যাংক আপনাকে আপনার নিট আয়ের পরিমাণ জিজ্ঞাসা করবে। আপনি প্রতি মাসে আপনার মোট আয়ের ১৫-২০(ব্যাংক ভেদে) গুণ পর্যন্ত ব্যক্তিগত লোনের জন্য অথবা ৬০গুন পর্যন্ত হোম লোনের জন্য যোগ্য। তবে আপনার যদি এই লোন আবেদন এর বাইরে অন্য কোনো লোন বা ক্রেডিট কার্ড বা ইএমআই থাকে তবে ব্যাংক আপনার আয়ের হিসেব থেকে এটি কেটে তারপর আপনার এনআইএর (NAI) ‘নেট উপলভ্য আয়’ গণনা করবে। এই এনআইএর ১৫-২০ গুন হিসেব করে ব্যাংক আপনাকে লোন অফার করবে এবং ইএমআই(মাসিক কিস্তি) হিসেব হবে যেটা আপনাকে ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে লোন গ্রহণের পর। শুধুমাত্র আপনার মাসিক আয়ের উপরে নয়।
আসুন নীচের উদাহরণটি ধরা যাক:
নীচের টেবিলটিতে আপনার প্রতি মাসে উপার্জনের(বেতনের) একটা ব্রেকআপ।
আয় | পরিমান | কর্তন | পরিমান |
মূল বেতন | ৩৫০০০ | প্রভিডেন্ট ফান্ড | ৩০০০ |
যাতায়াত | ৩০০০ | ইনকাম ট্যাক্স | ১০০০ |
বাড়িভাড়া | ১৫০০০ | গ্রাচুইটি | ৫০০ |
LTA/LFA | ৯০০০ | ||
মেডিক্যাল ভাতা | ২৫০০ | ||
অন্যান্য | ৪০০০০ | ||
সর্বমোট | ১,০৪,৫০০ | নেট ইনকাম | ১,০০,০০০ |
এখন ধরে নেয়া যাক বর্তমানে আপনার কোনো লোন নেই এবং নিখরচায় আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে সকল প্রকার কর্তনের পর পুরো একলাখ টাকা। তবে এখানে একটা জিনিস লক্ষণীয় যে ব্যাংক অনেক সময় LTA/LFA (Leave Travel Assistance or Leave Fair Assistance) এবং মেডিক্যাল ভাতা বেতন হিসেবের সময় ধরে না। সঙ্গত কারণেই এগুলো আপনার বেতনের হিসেবে ধরা হয় না (তবে এর বিপরীত চিত্রও আছে)। সুতরাং আপনার নেট উপলব্ধ আয় কমে হবে =১০০০০০-(৯০০০+২৫০০)=৮৮৫০০টাকা।
আপনার পার্সোনাল লোনের যোগ্যতা তাই = ৮৮,৫০০ x ১৫ = ১৩,২৭,৫০০ টাকা
এবং হোম লোনের যোগ্যতা = ৮৮,৫০০ x ৬০=৫৩,১০,০০০ টাকা
হোম লোনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ব্যাংক আপনার ইএমআই নেট মাসিক ইনকামের ৪০-৫০% পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখবে। যার অর্থ আপনি যত টাকা হোম লোন হিসেবে পাবেন তার ইএমআই আপনার মাসিক ইনকামের ৫০% এর বেশি ছাড়িয়ে যাবে না। ব্যাংকিং ভাষায় বললে FOIR (Fixed Obligations to Income Ratio বা আয়ের অনুপাতের নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা) ৪০-৫০% এর বেশি হওয়া উচিত নয়। এই বাধ্যবাধকতা আপনার সকল আবেদনকৃত লোনের এবং অন্যান্য সকল চলমান লোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আপনার লোন প্রাপ্তির যোগ্যতা বাড়ানোর কিছু উপায় রয়েছে।
১) দীর্ঘ মেয়াদী জন্য বেছে নিন:
আপনার হোম লোন বা ব্যক্তিগত লোনের যোগ্যতা আপনার আয়ের ভিত্তিতে হিসেব করা হয়, লোন পরিশোধের জন্য অনুমোদিত বছরের সংখ্যার ভিত্তিতে নয়। ব্যাংককে জিজ্ঞাসা করুন আপনাকে দীর্ঘতম সম্ভাব্য মেয়াদে লোন দিতে। আপনি যদি আপানর চাকুরীর অবসর থেকে অনেক দূরে থাকেন তাহলে ব্যাংক খুব সহজেই রাজি হবে। তবে একটা জিনিস আপানকে খেয়াল রাখতে হবে যে হবে তা হল দীর্ঘমেয়াদী ঋণে মেয়াদান্তে সুদের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। আপনি যদি এটাতে জন্য প্রস্তুত থাকেন তাহলে আপনাকে বড় অংকের টাকা প্রস্তাব করা হতে পারে।
আপনাকে দীর্ঘতম সম্ভাব্য মেয়াদ দিতে ব্যাংককে জিজ্ঞাসা করুন। আপনি যদি এখনও অবসর থেকে দূরে থাকেন তবে ব্যাংকগুলি আপনাকে দীর্ঘকালীন মেয়াদের প্রস্তাব দিতে আগ্রহী হবে না। আপনাকে কেবলমাত্র সাবধান হওয়া দরকার যে দীর্ঘকালীন সময়ের সাথে আপনার আগ্রহগুলি বহির্গামী হয়। আপনি যদি এটিটি প্রস্তুত রাখতে প্রস্তুত হন তবে আপনাকে বৃহত্তর loanণের পরিমাণ দেওয়া হবে
২) আপনার স্ত্রী / পিতামাতার সাথে আপনার আয়ের হিসাব একত্রিত(Club) করুন:
আপনার যে পরিমাণ লোন প্রয়োজন তা ইএমআই প্রদানের ক্ষেত্রে যদি আপনার আয় অপ্রতুল হয়, তবে যৌথ লোনের জন্য ব্যাংককে জিজ্ঞাসা করুন। আপনার এবং আপনার স্ত্রী / পিতা বা মাতা হিসাবে দু’জনের নামে আপনার লোন নিন। এটি আপনার যোগ্য নেট উপার্জনের সামর্থ বাড়িয়ে তুলবে এবং আপনার লোন পরিশোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।
3) আবেদনের আগে বিদ্যমান দায়গুলি পরিশোধ করে দিন:
আপনার লোন কতটা জরুরি এবং আপনার বিদ্যমান দায়বদ্ধতাগুলি কী তা নিয়ে একটি খসড়া করুন। বিভিন্ন উৎস (যেমন ধার-কর্য, বা পিতামাতা বা স্ত্রী) থেকে টাকা নিয়ে এই লোণগুলি পরিশোধ করলে আপনার লোন প্রাপ্তির পরিমাণ ও বেড়ে যাবে। তবে এটি তখনই সম্ভব যখন বকেয়ার পরিমাণ আপনার নাগালের মধ্যে থাকে।
৪) আপনার অ্যাপ্লিকেশনটিতে আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সমস্ত সুবিধাগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন:
আপনি যখন এগুলি অন্তর্ভুক্ত করবেন, আপনি ব্যাংকে বলুন যে এই আপনার চাকুরীদাতা এইসব সুবিধাদি দিয়ে থাকে যেটা আপনার মোট উপলভ্য আয়কে বাড়ায়ে দেয়। এই আনুষাংগিক সুবিধাদির মধ্যে আছে পারফরম্যান্স বোনাস, ওভারটাইম, জ্বালানী ব্যয়, টেলিফোন ও ইন্টারনেট বিল, অতিরিক্ত ভ্রমণ ভাতা ইত্যাদি।
৫) স্টেপ আপ লোন (হোম লোনের জন্য) সন্ধান করুন:
ব্যাংককে জিজ্ঞাসা করুন আপনাকে শুরুতে ছোট ইএমআই দিতে এবং আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে ইএমআই এর সাইজ বাড়াতে। বস্তত এসব লোণকে বলা হয় স্টেপ আপ লোন, যা আপনাকে বড় অংকের লোন পেতে সাহায্য করে এবং ধরে নেয়া হয় আপনি ভবিষ্যতে আরও বড় ইএমআই প্রদান করতে পারবেন