সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় আমাদের আর্থিক স্বাস্থ্যের উপরে ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে বেশি টাকা খরচ না করে আনন্দ ফুর্তি করা যায়? আমরা জানাচ্ছি কিভাবে আপনি বাজেটের মধ্যে বন্ধুদের সাথে আনন্দ ফুর্তি করতে পারেন।
আপনি কি কখনো বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার আগে ফোন রিসিভ করা বা মেসেজের উত্তর দেওয়া এড়িয়ে গেছেন? চিন্তা করবেন না, এরকম আরো অনেকেই করে। অনেকেই আমরা এ কাজটি করে থাকি শুধু মাত্র বেশি টাকা-পয়সা খরচ হবে এই চিন্তা করে। এটা তেমন কোন ব্যাপার না যে আপনার কাছে কোন সময় টাকা না থাকলে আপনার বন্ধুরা দেবেনা, এবং আপনি পরেও বন্ধুদের টাকা শোধ করতে পারেন। কিন্তু অনেক সময় আমরা বন্ধুদের নিমন্ত্রণ এড়িয়ে যাই কারণ আমি কোন রেস্টুরেন্ট বা শপিং আমরা এড়িয়ে যেতে চাই কেননা সেগুলো আমাদের সামর্থে কুলাবে না।
বন্ধুত্ব অনেক সময় দামি সাবস্ক্রিপশন হয়ে দাঁড়ায়। এখানে সাবস্ক্রিপশন ফি হিসেবে আপনি বিভিন্ন জায়গায় বন্ধুদের সাথে গিয়ে টাকা খরচ করবেন, তার বিনিময়ে তাদের সঙ্গ পাবেন। বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা করতে গেলে টাকা তো খরচ হবেই। এবং বেশি হয়ে গেলে তা আপনার আর্থিক অবস্থার উপরে প্রভাব ফেলবে।
আসলে আমাদের কেউই ঘরে বন্দী হয়ে শুধুমাত্র টাকা জমাতে চাই না। আমাদের টাকা খরচ হল আল্লাহ বন্ধুদের সাথে বাইরে গিয়ে মজা করতে চাই। তাই তো? তাহলে এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের কয়েকটি উপায় বলবো যাতে আপনারা বাজেটের মধ্যে থেকে বন্ধুদের সাথে আনন্দ করতে পারেন।
এখানে কয়েকটি টিপস দেওয়া হয়েছে যাতে আপনি আরও ভাল ভাবে আপনার ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন:
এলকোহল এবং মাদক কে না বলুন
উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা অনেকেই এলকোহল এবং অন্যান্য মাদকের সাথে পরিচিত হয় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে। শুরুর দিকে হয়তো আপনার অন্য কোনো বন্ধু খরচ দিতে পারে, কিন্তু সেই আড্ডাতে আপনি নিয়মিত যাতায়াত আপনাকে এলকোহল এবং মাদকের জন্য খরচা দিতে হবে। একদিকে যেমন এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর অন্যদিকে এগুলোর খরচ অনেক বেশি। তাই আপনি এ ধরনের আড্ডা পরিহার করলে আপনার স্বাস্থ্যের যেমন ক্ষতি হবে না এমনি বেশ পরিমাণে টাকা পয়সা বেঁচে যাবে।
তার পরেও যদি কালেভদ্রে আপনাকে এরকম কোন বন্ধুদের সামাজিক আড্ডায় যোগদান করতে হয়, তাহলে আপনি যাবার সময় অন্য কোনও খাবার নিয়ে যেতে পারেন যেটা ওই আড্ডাতে সবাই মিলে খেতে পারবেন।
কেনাকাটার সঙ্গী হওয়া এড়িয়ে যান
অনেক সময় বন্ধুরা তাদের কেনাকাটা সময় অন্য কোন বন্ধুদের অনুরোধ করে সাথে যাবার জন্য। আপনি যদি কেনাকাটা করার উদ্দেশ্য ছাড়া বন্ধুদের সাথে যোগদান করেন তাহলে দেখবেন আপনার বন্ধুরা যখন কেনাকাটা করছে আপনারও কিছু না কিছু কিনতে ইচ্ছা করবে। এ সময় বেশিরভাগ মানুষই অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে টাকা নষ্ট করে। তাই যখন কোনো বন্ধু আপনাকে কেনাকাটার সঙ্গী করতে চাইবে তখন সম্ভব হলে এড়িয়ে যাবেন। তবে যদি আপনার কোন কেনাকাটার লিস্ট অলরেডি তৈরি থাকে তাহলে আপনি তাদের সাথে যোগ দিতে পারেন। অথবা আপনার বন্ধুর যদি আপনার কোন অভিজ্ঞতার দরকার হয় তার কেনাকাটার ক্ষেত্রে তখন আপনি আপনার অভিজ্ঞতা দিয়ে কেনাকাটার সময় তাকে সাহায্য করুন। যেমন ধরুন আপনার লেটেস্ট গ্যাজেটের প্রতি একটি আকর্ষণ রয়েছে। আপনার বন্ধুর যদি নতুন একটি ল্যাপটপ কিনতে আপনার সাহায্য চায় তখন আপনার তার সাথে ল্যাপটপ কিনতে গেলে আপনার কোন ক্ষতি নেই বরং তার উপকার হবে।
অফ-পিক আওয়ারে জায়গাগুলিতে যান
মুভি থিয়েটার, পার্ক ও বিভিন্ন বিনোদন স্থানে অফিস আওয়ারে অনেক ক্ষেত্রে খরচ কম থাকে। যেমন মুভি থিয়েটারে রাতের মুভিতে টিকেটের দাম বেশি থাকে। আবার অনেক বিনোদনের জায়গায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এন্ট্রি ফি বেশি থাকে। এ ব্যাপার গুলো মাথায় রেখে আপনারা বন্ধুরা মিলে ঘুরতে গেলে কিছু টাকা বাঁচাতে পারবেন।
ডিসকাউন্ট কুপন এর সুবিধা নিন:
অনেক সময় বিনোদন পার্ক, রেস্টুরেন্ট বা অন্যান্য বিনোদনের জায়গায় ডিসকাউন্ট কুপন এর সুবিধা পাওয়া যায়। বন্ধুরা মিলে ডিসকাউন্ট কুপন এর সুবিধা নিয়ে বিনোদনের জায়গা গুলোতে বেড়াতে গেলে সবার জন্যই টাকা বাঁচবে। এছাড়াও অনেক সময় ক্রেডিট কার্ড, গ্রামীণফোনের কাস্টমার হিসেবে কিছু কিছু ছাড় পাওয়া যায়। এই ডিসকাউন্ট কুপন এবং ছাড়ের সুবিধা যতটা সম্ভব নিয়ে নিন।
বিনামূল্যে অনুষ্ঠানগুলোতে ঘুরে বেড়ান
আপনারা হয়তো এই ব্যাপারগুলোতে এড়িয়ে যান, কিন্তু একটু খেয়াল করলে আপনারা আপনাদের চারপাশের বিভিন্ন অনুষ্ঠান বিনামূল্যে যোগ দিতে পারেন। যেমন কোন এলাকার ব্যান্ডের পারফরম্যান্স, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনুষ্ঠান, ফটোগ্রাফি বা আর্ট এক্সিবিশন, মেলা ইত্যাদি। আপনার শহরে খোঁজ করলে এরকম অনেক অনুষ্ঠান পাবেন। যেখানে বন্ধুরা মিলে একসাথে গিয়ে অনুষ্ঠান দেখার পাশাপাশি আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে পারবেন।
পার্কে বেড়াতে পারেন
বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে সবসময় দামি রেস্টুরেন্টে খেতে হবে তা কিন্তু না। কয়েক বন্ধু মিলে কিছু খাবার-দাবার কিনে বিকেলবেলায় যে কোন পার্কে হাজির হতে পারেন। কিন্তু বন্ধুরা মিলে পিকনিক বেরিয়ে যেতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে আপনাদের কোন প্রতিষ্ঠিত বিনোদনের জায়গায় না গেলেও চলবে। কারণ বন্ধুরা মিলে যে কোন জায়গায় মজা করা যায়।
লংড্রাইভে ঘুরে আসুন
লং ড্রাইভে যেতে কে না পছন্দ করে? একদিক থেকে এটা যেমন সাস্ত্রয়ী অন্যদিকে বন্ধুদের সাথে ভালো একটি সময় কাটানো যায়। শুধুমাত্র আপনাদেরকে তেলের খরচ এবং খাওয়া-দাওয়ার খরচই দিতে হবে। আবার চাইলে একবারে বাসা থেকে খাবার দাবার তৈরি করে নিয়ে নিতে পারেন।
ঘরোয়া আড্ডা
ঘরের মধ্যেও অনেকভাবে মজা করা যায়। অনেক সময় বন্ধুরা বিভিন্ন ইনডোর গেমস বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে একসাথে প্রতিযোগিতা করে থাকে। কেউ বা মুভি দেখে, কেউবা বাসার ছাদে বারবিকিউ পার্টি করে সময় কাটান। আবার চাইলে আপনারা সবাই আড্ডার সময় এক একজন এক একটা খাবারের আইটেম নিয়ে আসতে পারেন। খেতেখেতে কোন বোর্ড গেম বা অনলাইনে মুভি দেখেও ভাল ভাবে আড্ডা দেয়া যাবে। ঘরের মধ্যে যদি বন্ধুরা মিলে কম খরচে মজা করার এতগুলো উপায় থাকে, তাহলে কেন খালি খালি সবসময় বাইরে গিয়ে আড্ডা দিয়ে টাকা খরচ করবেন?