কোনও আর্থিক মায়াজাল থেকে বাঁচতে চান? এই সহজ টিপস অনুসরণ করুন এবং আপনার আর্থিক উন্নতির যাত্রা শুরু করুন।
কিভাবে আর্থিক উন্নতি করবেন?l
কখনও কি চিন্তা করেছেন যে আপনার যদি চাকরি চলে যায় বা এক-দুই মাসের জন্য যদি আপনার বেতন আটকে যায় তাহলে কি করবেন? আপনার একার না, যেসব মানুষজন এখন ক্যারিয়ারের শীর্ষে আছেন তারাও কোনো এক সময় এই ভাবনার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন।
এই উদ্বেগের পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ এই জাতীয় জরুরি পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক জরুরি তহবিল না থাকা। আমরা প্রায়ই আমাদের আই এর চেয়ে বেশি ব্যয় করি, বা আমাদের ক্রেডিট কার্ডের উপর নির্ভর করি, এমনকি বন্ধুবান্ধব বা পরিবার থেকে টাকা ধার নেই। আপনার আর্থিক সমস্যা যাই হোক না কেন, আপনি ঋণের জগতে নিজেকে উন্মুক্ত করে মূলত আপনার আর্থিক ভবিষ্যত নষ্ট করছেন।
আপনি এই রকম আর্থিক মায়াজালে পড়তে যাইবেন না, তাই তো? তাহলে আপনি আপনার আয়-ব্যয়ের হিসাব ভালো মত পর্যবেক্ষন করুন এবং প্রয়োজনে আপনার জীবনযাত্রা পরিবর্তন করুন। আমাদের বিশ্বাস করতে পারেন যে – এটি যতটা কঠিন মনে হচ্ছে ততটা কঠিন নয়।
এখানে কয়েকটি সহজ টিপস রয়েছে যা আপনার আর্থিক উন্নতি করতে এবং অর্থ সাশ্রয় করতে সাহায্য করবে:
আপনার বিলগুলি পর্যালোচনা করুন
আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ড বিল বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবৃতি কতবার দেখেছেন? আমাদের বেশিরভাগ লোকেরা সাধারণত ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ (minimum due) প্রদান করেন। এ থেকে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে আমরা তেমন কোনও টাকা-পয়সা জমাতে পারিনা। আপনার কি কোনও ধারণা আছে যে আপনার বিলগুলি না দেখে আপনি কি মিস করছেন?
ঠিক আছে, শুরু করার জন্য, এটি আপনাকে বিলিংয়ের কোনও ভুল সনাক্ত করতে সহায়তা করবে। যদি আপনি কেবল সর্বনিম্ন পরিমাণ অর্থ প্রদান করে থাকেন বা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে অর্থ প্রদান করতে ভুলে যান, তবে এটি আপনাকে প্রতি মাসে কতটা সুদ দিচ্ছেন তার ধারণা দেবে। সাথে আপনি আরও বুঝতে পারবেন যে কতটা টাকা আপনি অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটার জন্য ব্যবহার করছেন। এই পদ্ধতি শুধুমাত্র আপনাকে অতিরিক্ত ব্যয় কমাতে সাহায্য করবে না, একই সাথে আপনার বিল (সম্ভব হলে সব টাকা) সময়মত জমা দেয়ার ভালো একটি কৌশল তৈরি করতে সহায়তা করবে।
একটি সঞ্চয় পরিকল্পনা তৈরি করুন
সাপ্তাহিক বা মাসিক সঞ্চয় পরিকল্পনা তৈরি করার চেষ্টা করুন। আপনি যদি সম্পূর্ণভাবে আপনার চাকরির বেতনের উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করেন, তবে প্রাথমিকভাবে সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে অল্প পরিমাণে সঞ্চয় করা আপনার পক্ষে কঠিন হতে পারে। তবে, যদি না আপনি এটির অভ্যাস তৈরি না করেন তবে আপনি কখনও অপ্রত্যাশিত আর্থিক পরিস্থিতির/দুর্ঘটনার জন্যে আপনার সঞ্চয় তৈরি করতে পারবেন না।
একটি সহজ লক্ষ্য সেট করে শুরু করুন। উদাহরণস্বরূপ, প্রত্যেক সপ্তাহে ১০০ বা ৫০০ টাকা মাসে ২০০০ টাকা জমানোর জন্য চেষ্টা করুন। আপনার অল্প প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে খরচের থেকে ১-২ টা বাদ দিয়ে আপনি এই টাকা সহজে জমাতে পারবেন। যেমন হতে পারে যে আপনার দিনে এক কাপ কফি কম খেলেন, বা ফাস্টফুড খাওয়া কমিয়ে দিলেন, বা সফ্ট ড্রিঙ্কস খাওয়া বাদ দিয়ে দিলেন।
আপনার পাওনাদারদের সাথে আলোচনা করুন
আপনার ক্রেডিট কার্ড বা ঋণের অর্থ টাকা ফেরৎ কঠিন হয়ে যাচ্ছে? আপনি আপনার পাওনাদারদের সাথে পুনরায় আলোচনা করতে পারেন। আপনার ঋণ শোধ করার সময় আপনি আপনার ঋণদাতার সাথে কথা বলে প্রয়োজনে সুদের হার কমাতে, বা সময় বাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করতে পারেন। তবে একটা ব্যাপার মনে রাখবেন যে তারা যে আপনার প্রত্যেকটা অনুরোধ রাখবেই তার কোন নিশ্চয়তা নেই কিন্তু তারপরও চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।
বিনিয়োগ এড়িয়ে যাবেন না
আপনি যদি পরবর্তী সময় বা শেষ জীবনে বড় আকারের টাকা জমাতে চান বা সম্পদ করতে চান, তবে আপনার বিনিয়োগ শুরু করা দরকার। এবং আপনার বিনিয়োগগুলি কেবল ঝুঁকিমুক্ত বিকল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়। ইক্যুইটির মতো বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকলেও আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে যথেষ্ট পরিমাণে সম্পদ তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।
আরেকটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন তা হচ্ছে তরুণ বয়সেই বিনিয়োগ শুরু করা ভালো। কেন? প্রথমত, কারণ আপনি ঝুঁকি নিতে পারবেন। এবং দ্বিতীয়ত, আপনার অর্থ সম্পদ বাড়ানোর জন্য আপনার যথেষ্ট সময় পাবেন। তবে বেশিরভাগ তরুণ বিনিয়োগের দিকে তেমন আগ্রহী থাকে না। যদিও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, তবে তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ শুরু করলে দীর্ঘমেয়াদে প্রচুর সম্পদ তৈরি সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আপনি সম্ভবত ভাবছেন যে আপনার কোথায় বিনিয়োগ করা উচিৎ, তাই না? এটি আপনার ঝুঁকি নেবার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে, আপনি যদি আপনার ২০ বা ৩০ এর দশকে থাকেন তবে সম্পদের বরাদ্দ হওয়া আবশ্যক। সঠিক ভাবে ঝুঁকি ও ঝুঁকির বিপরীতে সফলতার ভারসাম্য করতে পারলে, আপনার একটি শক্ত আর্থিক ভিত্তি তৈরি করার সম্ভাবনা করছেন।
একটি সুচিন্তিত বাজেট তৈরি করুন
আপনি যদি নিজের টাকার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান তবে আপনাকে একটি সুনির্দিষ্ট বাজেট তৈরি করতে হবে এবং এটি অনুসরণ করে চলতে হবে। এটি সহজেই আপনার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের জন্য সংরক্ষণ করতে সহায়তা করবে। বাজেট তৈরি করা আপনাকে কীভাবে আপনার অর্থ ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেবে। এটি পরিবর্তে আপনাকে অকেজো ব্যয় কাটাতে সহায়তা করবে।
আপনার বাজেটে আপনার সব ধরনের খরচ উল্ল্যেখ থাকতে হবে তা বড় হোক বা ছোট। তবে মনে রাখবেন এমন কোনও আঁটসাঁট বাজেট তৈরি করবেন না যা আপনি ঠিকভাবে অনুসরণ করতে কষ্ট হয়। এছাড়াও সম্ভব হলে প্রত্যেক ছয় মাসে আপনার বাজেট আপনি আবার চেক করবেন। কারণ আপনার এর মধ্যে যদি আয় ব্যয় অতিরিক্ত পরিবর্তন হয় তাহলে আপনি যাতে বাজেটটা আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
অযাচিত ব্যয় দূর করুন
যেমনটি আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি, আপনি যদি আপনার আর্থিক উন্নতি করতে চান তবে আপনার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলো বাদ দিতে হবে।আপনি যদি আপনার সঞ্চয় বাড়াতে চান এবং আপনার বিলগুলো সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করতে চান তাহলে এই অতিরিক্ত ও প্রয়োজনীয় খরচ গুলো আপনার বাদ দেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
আসুন তাহলে হিসাব করে দেখি যে কোন কোন ব্যয় গুলোকে আমরা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি। সহজভাবে বলতে গেলে অপ্রয়োজনীয় সেগুলোই যেগুলোর আসলে আপনার সত্তিকারের কোনো প্রয়োজন পূরণ করে না কিন্তু তারপরও আপনি খরচ করেন। যেমন ধরুন আপনার যদি আপনার ওয়ারড্রব ভর্তি প্রায় নতুন জামাকাপড় থাকে তারপরও আপনি যদি কিছুদিন পরপর জামা কিনতে যান বা কাপড় কিনতে যান সেগুলো অবশ্যই আপনার অপ্রয়োজনীয় ব্যয়।
এখানে কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং তাদের থেকে তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল বিকল্প তুলে ধরছি:
ডিসের লাইন – যদি আপনার বাড়িতে কোনও ইন্টারনেট সংযোগ থাকে এবং এবং আপনি বেশিরভাগ সময় অনলাইনে কনটেন্ট দেখেন তাহলে আপনার আলাদা করে ডিসের লাইনের টাকা দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নেটফ্লিক্স, আমাজন এর মতো বিভিন্ন সাইটে আপনার পছন্দমত সিনেমা বা সিরিজ পাবেন আপনার এগুলো দেখার জন্য শুধুমাত্র ইন্টারনেট কানেকশন ই যথেষ্ট।
জিম – আমরা অনেকে জিমের মেম্বারশিপ নিয়ে থাকে কিন্তু আমি আসলে জিমে যাই না, নিজেরাই নিজেদের ফাঁকি দেই। আপনি যদি আসলে প্রতিনিয়ত না যেয়ে থাকেন তাহলে আপনার জিম মেম্বারশিপ কন্টিনিউ করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং এর পরিবর্তে আপনি কাছাকাছি পার্কে বা খালি জায়গায় হাঁটাচলা করতে পারেন এবং নিজেকে ফিট রাখার জন্য ঘরে বসে বা বন্ধুদের সাথে মিলে হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। পরবর্তীতে আপনার যদি মনে হয় যে আপনি প্রতিনিয়ত জিমে যাবেন এবং ফিটনেস ধরে অভ্যাস গড়ে উঠলে তখন আপনি প্রয়োজনে আবার কি মেম্বারশিপ নিন।
সৌন্দর্য – নিজেকে প্রতি দু’সপ্তাহে সেলুনে ছুটে যান? আপনি যখন ঘরে বসে নিজেকে সুন্দর করতে পারেন তখন কেন সেলুনে গিয়ে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করবেন? অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের বিউটি-টিপস পাওয়া যায় যা সেলুনের চার্জের থেকে অনেক কম পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে করতে পারবেন। শুধুমাত্র বিশেষ প্রয়োজনেই বিউটি সেলুনে যাওয়া প্র্যাকটিস করেন।
আপনার লক্ষ্য ঠিক করে এগিয়ে যান
আপনি যদি কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ না করে শুধুমাত্র টাকা জমানোর জন্য টাকা জমিয়ে যান তাহলে কোন এক সময় আপনি সব টাকা শেষ করে ফেলবেন। তার থেকে আপনি স্বল্প সময়ে বা দীর্ঘমেয়াদি কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। এবং লক্ষ্য পূরণ করার জন্যই আপনার টাকা জমা সঞ্চয় করেন। আপনি নিজেই নিজের লক্ষ্য গুলো নির্ধারণ করতে পারবেন। যেমন ধরেন আপনি ঠিক করলেন যে আপনি একটি আপদকালীন ফান্ড তৈরি করবেন, একটি বাড়ি কিনবেন বা গাড়ি কিনবেন, আবার হয়তো আপনার ঋণ আছে সবার আগে টাকা জমিয়ে সেই দিনগুলো শোধ করবেন।
খুব কঠিন না, তাই না? আপনাকে যা করতে হবে তা হল এই টিপসগুলি মাথায় রাখুন এবং এগুলো আপনি অনুসরণ করলে আপনার ব্যক্তিগত আর্থিক অবস্থা দিন দিন আরো ভালো হতে থাকবে।