আকাশ একজন আইটি অফিসার ছিলেন এবং যাঁর একটা খুব ভালো ক্যারিয়ার ছিল। সে স্যালারী হিসেবে যা পেত তা দিয়ে তার চাহিদা পূরনের পরও অতিরিক্ত থেকে যেত। আকাশ সিদ্ধান্ত নিল সে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করবে। এখন আমরা দেখি যে সে কিভাবে তার অর্থ ব্যবস্থাপনা করেছিল। সে একটা কার লোন এবং একটা হোম লোনের জন্য আবেদন করেছিল। কারের দাম ছিল ২০ লক্ষ টাকা, একটু বিলাসী যদিও কিন্তু সে সব সময়ই একটা ব্রান্ডের মালিক হতে চেয়েছিল। তারপর সে প্রিমিয়াম ও উচ্চমূল্যের ৫ বেডরুমের একটা অ্যাপার্ট্মেন্টে বিনিয়োগ করল। তার স্ত্রী তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্ঠা করেছে যেন বেশি বাড়াবাড়ি না করে, কিন্তু কোনো লাভ হয় নি।
বাড়ির সাথে নিয়ে যা তার চাহিদা পূরণের চেয়ে বেশি, আকাশ তার ভবিষ্যতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আসুন আমরা দেখি যে সে কীভাবে তার আর্থিক পরিচালনা করেছিল। তিনি গাড়ি ঋণ এবং হোম ঋণের জন্য আবেদন করেছিলেন। গাড়িটির দাম ছিল ১০ লক্ষ টাকা, কিছুটা উপভোগ কিন্তু তখন তিনি সর্বদা ব্র্যান্ডটির মালিক হতে চেয়েছিলেন। তারপরে তিনি একটি প্রিমিয়াম আপমার্কেট ৫ বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী শীলা পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন যে তারা যেন এতটা বাড়াবাড়ি না হয় তবে কোনও লাভ হয় না।
সে(শিলা) সম্প্রতি তার চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে কিছুটা বিরতির জন্য ও তার এক বছর বয়সী বাচ্চাকে বেশি সময় দেয়ার জন্য। কোনো প্রকার অতিরিক্ত সঞ্চয় ছাড়ায় তাত্ক্ষণিক ভবিষতের জন্য আকাশ যেভাবে একক উপার্জনের উপর ব্যয় করছে তা নি সে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল। এমনকি সে তার ইএমআই এবং মাসিক ব্যয় মেটানোর পর বাকি যে টাকা থাকে তার সবটুকু সে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করল। এটা ছিল ২০০৭ সালের ঘটনা। সবকিছু ভালোই চলছিল যতক্ষণ না ২০০৮ সালের আকাশের স্টক গুলো উলটপালট শুরু হয়। এই অবস্থায় সে নতুন কোনো উপায় বেছে নেয়ার পরিবর্তে সে আরও শেয়ার কেনা শুরু করে যেগুলো সময়ের সাথে সাথে আরও কমতে শুরু করে। তবে আসল ধাক্কাটা লাগে তখনই যখন বৈশ্বিক মন্দা শুরু হয় এবং তার কোম্পানি কর্মী ছাটায় করে।
আকাশ কীভাবে এটা মোকাবেলা করেছিল? কীভাবে তিনি তার ইএমআই প্রদান করেছিল?
আকাশ যদিও একটা স্মার্ট কাজ করেছে। সে তার আর্থিক ঝামেলার জন্য একটি ঋণ পরামর্শ কেন্দ্রের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা তাকে তার অর্থ পরিচালনার সঠিক উপায় দেখিয়েছিল। তারা তাঁর এবং তার ব্যাংকের মধ্যস্থতাও করেছিল। ঋণ পরামর্শদাতাদের পরামর্শের ভিত্তিতে, তিনি তার সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ পেয়েছিলেন। এরপরে তিনি আকাশকে তার গৃহ ঋণের জন্য অর্থের একটি অংশ এবং আরেকটি তার গাড়ীর ঋণের জন্য আগাম পরিশোধ করতে সহায়তা করেছিল। সে ব্যাংক থেকে লিখিত সম্মতিও পেয়েছিল যে চাকরি পেলে সে তার ঋন পুনরায় পরিশোধ শুরু করবেন। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলি আপনাকে বাধ্যতামূলক করে যদি আপনি বেশিরভাগ অর্থ বা অর্থের কিছু অংশ পরিশোধের ব্যবস্থা করেন তবে তা যদি না হয় তবে এটি কোনও অর্থের চেয়ে কোনও মূল্য নয়।
শিলার কোম্পানি মন্দার কারণে খুব একটা ক্ষতির মুখে পরে নি তাই সে তার পুরনো কোম্পানিতে আবার যোগদানা করে এবং এদিকে আকাশ কিছুটা বিরতি নেয় তার ছেলেকে সময় দেবার জন্য। ভাগ্যক্রমে আকাসজের জন্য শিলার সময়োপযোগী সহায়তা এবং ঋণ পরামর্শদাতাদের সহায়তার কারণে সে মানসিকভাবে শান্তি ফিরে পেল।
তার ছয় মাস পরে সে ভাল বেতনের একটি চাকরিতে যোগাড় করতে সক্ষম হলো যদিও সেটা তার আগের বেতনের চেয়ে ২০% কম ছিল। সে তার ইএমআই গুলি পুনরায় প্রদান করা শুরু করেছিলেন এবং ব্যাংকগুলিতে সুদের হার কমার সাথে সাথে আবারও সে ব্যাংকের সাথে কম সুদের হারে জন্য দরকষাকষি করেছিল। এতদ বিদ্যমান এই যে আর্থিক মন্দার আকর্ণে ঋণগ্রহীতাদের সুদের হারও কমিয়ে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে ন্সেন্ট্রাল ব্যাংকের চাপের পাশাপাশি, তিনি তার ব্যাংকের সাথে সমঝোতায় আসতে পেরেছিলেন। এখানে একটা বিষ্য় স্বীকার করতেই হবে যে সকলেই আকাশের মতো ভাগ্যবান নাও হতে পারেন। এটা একটা উদাহরন যে সে কিভাবে খুব অল্পের জন্য ঋণের বিশাল অতল গভীরে হারিয়ে না গিয়ে ভাগ্যরে জোরে বেচে গিয়েছিল। হ্যাঁ …সে সত্যিই খুব ভাগ্যবান।
তবে হ্যাঁ আকাশ তার জীবনে একটা মূল্যবান শিক্ষা পেয়ে। ভবিষ্যতের যেকোনো বিপর্যয় এড়াতে সে সহজ কিন্তু স্মার্ট কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে শুরু করেছিল।
ক) সে তার তিন মাসের বেতন আলাদা একটা একাউন্টে আপদকালীন ফান্ড হিসেবে রেখেছিল এবং সে এটিতে আরও তিন মাসের বেতন যোগ করার পরিকল্পনা করেছিল।
খ) সে এটা নিশ্চিত করেছিল তার বর্তমান ইএমআই তার বর্তমান আয়ের ৪০% যেন ছাড়িয়ে না যায়। এটাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সে নিয়মিত বিরতিতে আগাম কিছু টাকা পরিশোধ করত।
আপনি যদি আকাশের মত ঋণে আটকে যান এবং কীভাবে এটা মোকাবেলা করতে হয় জানেন না তবে এখানে কিছু পরামর্শ রইল।