আপনার যদি কোন কারণে চাকরি চলে যায় অথবা চাকরি চলে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে আপনার জন্য কয়েকটি টিপস আমরা তুলে ধরছি।
পরবর্তী চাকরিতে যোগদানের আগে বা চেষ্টা করার আগে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন।
সামগ্রিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারী ছাঁটাই করে, অথবা বেতন কমিয়ে দেয়। কারো কারো ক্ষেত্রে বলে দেয় – তোমার চাকরি আছে কিন্তু আমরা বেতন দিতে পারছিনা। এরকম সময় চাকরির বিজ্ঞাপন এর চেয়ে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। করণা মহামারীর সময় সারাবিশ্বেই অনেক লোক চাকরি হারিয়েছে, আবার অনেকেরই বেতন কাটা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো আবার অনেক কর্মচারীকে বিনা বেতনে ছুটি দিয়ে রেখেছেন।
যদি আপনার সাম্প্রতিক চাকরি হারানোর আশঙ্কা থাকে এবং আপনার যদি খুবই সামান্য সঞ্চয় থাকে, তাহলে আপনার জন্য আমরা কয়েকটি টিপস নিয়ে এসেছি যেগুলো আপনাকে ঋণের সাগরে ডুবিয়ে দেয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। মনে রাখবেন, যত তাড়াতাড়ি আপনি সমস্যা গুলো খুজে বের করবেন, ততো তাড়াতাড়ি আপনি সমাধান করতে পারবেন।
জরুরী তহবিল তৈরি করুন
জরুরী তহবিলের গুরুত্ব আসলে বলে কখনো শেষ করা যাবেনা। অন্ততপক্ষে আপনার ছয় মাসের খরচ আপনার জরুরী তহবিলে থাকা উচিত। আপনার বিভিন্ন জরুরী অর্থনৈতিক অবস্থা যেমন চাকরি হারানো, বেতন কমে যাওয়ার মত সময় আপনাকে বাঁচিয়ে দিবে। আপনার যদি এখনো কোনো জরুরি তহবিল না থাকে তাহলে কমপক্ষে আপনারা আয়ের ২০% আলাদা করে জমা করুন।
জরুরী তবে সঞ্চয় করতে করতে আপনি চিন্তা করতে থাকুন যে কিভাবে কম বাজেটে আপনি জীবন যাপন করতে পারবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার নিশ্চিত কোনো নতুন আয়ের উৎস তৈরি না হয় ততদিন পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকুন। শুরুতে আপনি চিন্তা করতে পারেন প্রতিদিন আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ করলে আপনার বর্তমান সঞ্চয় দিয়ে আপনি কমপক্ষে ৬ মাস চলতে পারেন।
কেনাকাটায় স্মার্ট হন
আপনি যখন আয় কমে যাবে, তখন কোনো পণ্যের দাম না দেখে হুট করে কিনে ফেলবেন না। আপনি প্রত্যেক সপ্তাহে আপনার প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি লিস্ট করুন এবং তা কোথায় কম দামে পাওয়া যায় সেগুলো খুজে বের করুন। প্রয়োজনে বিভিন্ন অনলাইন সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, যাতে তাদের ওপর আসলে আপনি নোটিফিকেশন পান।
এ সময় খরচ করবেন না অথবা ব্যক্তিগত লোন নিবেন না। আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড থাকে, তাহলে ক্রেডিট কার্ড এর সমস্ত পাওনা দিয়ে দিন। ক্রেডিট কার্ডের টাকা বাকি থাকলে প্রত্যেক মাসে তা আলাদা সুদ হিসাবে জমতে থাকবে। আপনি ক্রেডিট কার্ডে পুরো টাকা দিয়ে দেয়ার পরে, লিস্ট করুন যে কোন জায়গা থেকে আপনি জিনিস কিনবেন, এবং কোন অ্যাপ্লিকেশনে আপনার ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট মেথড হিসেবে সিলেক্ট করা থাকলে তা বাতিল করে দিন।
আপনার বীমা নীতি পর্যালোচনা করুন
আপনার যদি কোন বীমা থেকে থাকে, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে বীমার নিয়ম গুলো দেখে নেওয়ার এখনই ভালো সময়। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে বীমার সুবিধা গুলো কোন কিছু যেন আপনার প্রয়োজনের সময় বাদ না যায়। আপনি যদি বর্তমান বীমার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারেন, তাহলে অন্য কম কিস্তির বীমাতে পরিবর্তন করে নিন। আপনার বীমার প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে দেখুন যে কিভাবে বীমা পরিবর্তন করলে আপনাকে ক্ষতি সম্মুখীন না হতে হয়।
এছাড়াও আপনি আপনার বর্তমান আর্থিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আপনার দীর্ঘমেয়াদি এসব আর্থিক পরিকল্পনা রয়েছে তা পর্যালোচনা করে দেখতে পারেন। প্রয়োজনে আপনার কিছু সম্পদ বিক্রি করে দিয়ে বর্তমান অচলাবস্থা কাটিয়ে তুলতে পারেন। তবে বড় ধরণের কোনও আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রয়োজনে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
নতুন চাকরি খোঁজার পাশাপাশি দ্বিতীয় আয়ের উৎস তৈরি করুন
প্রথম দিন থেকে এটি আপনার করণীয় তালিকায় থাকা উচিত। আমাদের অনেকেই চাকরির পাশাপাশি দ্বিতীয় কোন আয়াত দিকে চিন্তা করেন না, কারণ তার হয়তো তার ক্যারিয়ারের জন্য তেমন কোন কাজে লাগবে না বলে। কিন্তু আপনার ক্যারিয়ারের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন অনেক স্কিল থাকতে পারে, যার দ্বারা আপনি চাকরির পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যেমন হয়তো বা ছবি তোলা, লেখালেখি করা, ছাত্র পড়ানো বা অন্য যেকোনো কিছু হতে পারে। আমাদের দেশে অনেকেই উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের পরে কম স্কিলের তেমন কোন কাজ করতে উৎসাহিত হয় না। কিন্তু আপনি চাকরি পাবার আগে অন্য যে কোন কাজ করতে কিন্তু আপনার সমস্যা হওয়া উচিত না যদি আপনি তাতে টাকা পান।
প্রথম চাকরির অফার কে হ্যাঁ বলার আগে সময় নিন
যখন আপনার চাকরি থাকবে না, তখন আপনি স্বাভাবিকভাবেই অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতায় থাকবেন। সেই আপনার প্রথমেই যে চাকরির অফার আসবে তা হুট করে গ্রহণ করা ঠিক না। আপনার অবস্থা বুঝতে পেরে হয়তো আপনাকে অনেকেই কম টাকায় চাকরির অফার দিবে, আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এ সময় আপনি যে চাকরির অফার পাবেন তা গ্রহণ করার আগে ভালোভাবে যাচাই করুন, ১-২ দিন সময় নিন তারপরে আপনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিন। হুট করে কম বেতনে চাকরি নেয়ার মানে আপনি পরবর্তী কয়েক বছর কম টাকা আয় করতে থাকবেন।