আপনি যদি এই প্রথম একা একা থাকতে শুরু করেন তাহলে আপনাকে নিজেকে স্বাধীন মনে হবে। আপনার নিজেকে প্রবল প্রতাপশালী মনে হতে পারে, যখন আর্থিক ব্যাপার গুলো সামনে আসে। আপনার জন্য আমরা কিছু উপদেশ নিয়ে এসেছি, যা হয়তো কাজে লাগবে।
বাবা মাকে ছেড়ে নিজে বাসা নিয়ে উঠছেন কিংবা নতুন শহরে চলে যাচ্ছেন? বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে নতুন চাকরিতে নতুন শহরে একা জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন? যদিও আমাদের দেশে বেশিরভাগ সন্তানেরা তাদের বাবা-মায়ের সাথে থাকে, তারপরও অনেকে প্রয়োজনের তাগিদে একা একা নতুন বাসায় জীবন শুরু করেন। নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেয়া শুরু করবেন তখন আপনার এবং খরচের স্বভাব পরিবর্তন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেল আমরা আপনাকে একা একা স্বাধীনভাবে থাকার সময় বাজেট করার ব্যাপারে সাহায্য করব।
মানুষ যখন প্রথমে একা একা যখন স্বাধীনভাবে থাকতে শুরু করে জীবনে কি হবে তা নিয়ে যেমন চিন্তা করে না। কিন্তু আপনি যখন একা একা থাকা শুরু করবেন, তখন আপনার সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মানসিকতা রাখতে হবে। আপনি তখনই আর্থিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করবে যখন আপনার টাকা পয়সা নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না। আপনি যখনই চিন্তা করা শুরু করবেন, তখন হয়তো আপনি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছেন কিন্তু আপনার আর্থিক স্বাধীনতা তখনো আসেনি। তাই আমরা আপনাকে আর্থিক ব্যবস্থাপনা সুশৃংখল করার জন্য কয়টি উপদেশ নিয়ে এসেছি।
জরুরী তহবিল
মানুষ যতই জানুক যে বিপদ বলে কয়ে আসে না, তারপরও বিপদের জন্য খুব কম মানুষই প্রস্তুত থাকে। জীবনে যে কোনো সময় অপ্রত্যাশিত খরচ হয়ে যেতে পারে। আমাদের জীবনের তো কোনো নিশ্চয়তা নেই; তাই বলে কি আপনি জরুরি তহবিল তৈরি করা ছেড়ে দিতে পারেন? তাই নতুন করে জীবন শুরু করার সময় সবার প্রথমে জরুরি তবে তৈরি করা উচিত। আপনার আয়ের থেকে প্রত্যেক মাসে অল্প অল্প করে সরিয়ে রাখুন। আপনি যদি আপনারা এর সব টাকা খরচ করে ফেলে তাহলে কখনোই আপনার প্রকৃত ভাবে জমবে না। কখনো চিন্তা করবেন না আগে খরচ করি তারপরে জমা করব। বরং চিন্তা করুন আগে টাকা জমাবো তারপরে বাকি অংশ খরচ করব।
জরুরী তহবিলের জন্য আপনি একটা লক্ষ্য ঠিক করতে পারেন। আপনি প্রত্যেক মাসে ১০০০, ৫০০০, ১০০০০ কিংবা আপনি যত খুশি নির্ধারণ করতে পারেন। প্রত্যেক মাসে এই নির্ধারিত টাকা অল্প অল্প করে আপনি সরিয়ে রাখবেন যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার জরুরী তহবিলের লক্ষ্য পূরণ না হয়।
আপনার লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পরেও আপনি চাইলে আরো টাকা জমা করতে পারেন। শুরুতে আপনার একমাসের আয়ের পরিমাণ জমা করলেন, তারপরে ছয় মাসের তারপরে সম্ভব হলে এক বছরের। এই টাকা আপনার যে কোন বিপদের সময় আর্থিক ভাবে সাহায্য করবে। যেমন কোন কারণে আপনার চাকরি চলে গেলে বা অসুস্থ হয়ে গেলে অন্যের কাছে হাত পাততে হবে না। জরুরী তহবিল একা একা থাকার সময় আর্থিক স্থিতি অবস্থা রাখতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে।
হিসেব করে কেনাকাটা করুন
নতুন করে একা একা জীবন যাত্রা শুরু করা যেমন উত্তেজনাপূর্ণ এমনি খরচসাপেক্ষ। এসময় আপনার মাথার মধ্যে চিন্তা করবে কিভাবে নতুন ভাষাটাকে সুন্দর করে সাজানো যায়। নতুন নতুন আসবাবপত্র, রান্নার জিনিসপত্র, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট কেনার জন্য হাত নিশপিশ করবে। আপনার প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কেনাকাটা করাই ভালো। সম্ভব হলে একবারে জিনিসপত্র না কিনে লিস্ট ধরে প্রত্যেক মাসে একটা বা দুইটা নতুন জিনিস কিনুন।
আরেকটা উপায় হচ্ছে জিনিসপত্র ধার করা। আপনার কোন বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের যদি অতিরিক্ত কিছু থাকে তাহলে আপনি প্রয়োজনে ধার নিতে পারেন। আবার আপনি চাইলে অনেকে হয়তো সেটা আপনাকে উপহার হিসেবে নিতে পারেন। এই জিনিসগুলো হয়তো আপনার পছন্দের সাথে নাও যেতে পারে তারপরও আপনার কাজ চলে যাবে। সব থেকে বড় কথা হলো আপনার টাকা বাঁচবে।
অনলাইনে এখন অনেক ব্যবহৃত জিনিস কেনা বেচা হয়। নতুন জিনিস কেনার আগে সেগুলো দেখে নিতে পারেন। এখন আমাদের দেশে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনি ব্যবহৃত জিনিস কম দামে পাবেন। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপে এই ধরনের বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস এর মধ্যে পেয়ে যান তাহলে আপনার পকেটের পয়সা বেঁচে যাবে।
এই কেনাকাটা করার আগে লিস্ট করে নিতে কখনো ভুলবেন না। আপনার প্রয়োজন এবং চাহিদা আলাদা করে তালিকা করুন। আপনার চাহিদার তালিকায় অনেক কম প্রয়োজনীয় জিনিস থাকতে পারে, প্রয়োজনের জিনিস গুলো আগে কিনে তারপরে চাহিদার তালিকা পূরণ করার চেষ্টা করুন।
বাজেট: আগে ও পরে
এই পয়েন্টটা খুবই সাধারণ কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট। আপনি একা জীবন শুরু করার আগে এবং জীবন শুরু করার পরে সম্ভাব্য বাজেট আগেই তৈরি করে ফেলুন। আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে দুইটা গল্পের মধ্যে আপনার বেশ কিছু অতিরিক্ত খরচ যোগ হয়েছে যেমন বাড়ি ভাড়া, পানির বিল, ইলেকট্রিসিটি বিল, গ্যাসের বিল এবং অন্যান্য আরো কিছু খরচ। বাজেট তৈরি করার সময় অতিরিক্ত খরচ গুলো যোগ করতে যেন ভুল না হয়। একটা ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত হতে পারে আপনার একা একা থাকতে যাবার সময় আগের চেয়ে বাজেট টাইট হবে। আপনি যদি আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখেন তাহলে আপনার একা একা কষ্ট কমে যাবে। যদি ভুল করে আপনি বাজেটের পরিকল্পনা না করে থাকেন তখন আপনাকে আপনার বেশ কিছু খরচ বাদ দিয়ে অতিরিক্ত খরচ মেটাতে হবে।
যতটুকু সম্ভব অটোমেট করুন
এই কাজটি করলে শুধু আপনার কিছু সময়ই বেঁচে যাবে না সাথে সাথে আপনার টাকাও বাঁচবে। আপনি যদি অটোমেটিক ভাবে আপনার সঞ্চয় এর টাকা, বিনিয়োগের টাকা কেটে ফেলার ব্যবস্থা করেন, তাহলে আগে থেকেই আপনার হাতে খরচের জন্য টাকা কমে যাবে। তখন আপনি অতিরিক্ত খরচ থেকে বেঁচে যাবেন। সাথে সাথে আপনি যদি বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল অটোমেটিক প্রদান করার ব্যবস্থা করতে পারেন তাহলে তো আরো ভালো। যদিও বাংলাদেশ ইউটিলিটি বিল অটোমেটিক জমা দেওয়ার ব্যবস্থা এখনো হয়নি। কিন্তু দেশের বাইরে যারা থাকেন তারা সহজেই চালু করতে পারেন।
মুদি দোকানের কেনাকাটা এবং খাওয়া-দাওয়া
আপনার সাবধানতার জন্য বলছি সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে মুদি দোকানের জন্য একটি বাজেট ঠিক করা এবং তা মেনে চলা। হয়তোবা এর আগে আপনি প্রতিনিয়ত মুদি দোকানের জিনিসপত্র কেনেননি, কিংবা নিজে রান্না করার জন্য কেনাকাটা করেন নি। সে জন্য প্রত্যেক সপ্তাহে আপনার মুদি দোকানের কেনাকাটার জন্য আলাদা করে তালিকা করা দরকার। ততটুকুই কিনবেন আপনার দরকার হবে। দেখুন তো আপনার চলে কিনা। যদি এতে আপনার বেশি হয় তাহলে পরের সপ্তাহে কম কিনবেন, আর যদি কম হয়ে যায় তাহলে পরের সপ্তাহে একটু বাড়িয়ে কিনবেন। আপনি যখন সাপ্তাহিক কেনাকাটার হিসাব বুঝে যাবেন, তখন মাসের বাজার একবারে করতে পারবেন।
একটা সহজ উপায় হতে পারে আপনি যদি আগে থেকে কোন বেলায় কী খাবেন তা ঠিক করে নিন। যেমন ধরুন আপনি সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার আলাদা আলাদা করে গ্ৰুপ করে নিতে পারেন। তাহলে আপনার মোটামুটি একটি আন্দাজ হয়ে যাবে যে সপ্তাহে আপনার কি পরিমানে বাজার করতে হবে। এছাড়াও প্রতি বেলার জন্য রান্না করা অনেক কষ্টকর। আপনি যদি কয়েক বেলার জন্য একসাথে রান্না করে করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য সুবিধা হবে। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন যে আপনি সময় এবং টাকা বাঁচাবেন কিন্তু কখনো খাবার নষ্ট করবেন না।
আনন্দ-ফূর্তি করুন
আগে হয়ত তো আপনি ‘Work hard, party harder.’ মন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু যখন আপনি একা একা থাকা শুরু করবেন আপনাকে তা পরিবর্তন করতে হবে। সময় আপনার কাছে অনেক অর্থনৈতিক দায়িত্ব চলে আসবে এবং জীবন কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু তাই বলে আনন্দ ফুর্তি করা একদম ছেড়ে দিবেন না। আপনি যখন করবেন তখন আপনার বিনোদনের জন্য কিছু টাকা আলাদা করে রেখে দিবেন। আপনি যদি বিনোদনের জন্য কোন টাকা খরচ না করে তবে একা একা জীবন কিছুদিন পরেই বিষন্নতায় ভরে যাবে। কাজের ফাঁকে সময় পেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন, বাইরে খাওয়া দাওয়া করুন, বেড়াতে যান, এবং সবশেষে নতুন উদ্যোমে আবার কাজে নেমে পড়ুন।
একা একা থাকা অনেক সময়ই মানসিক এবং আর্থিক ভাবে কঠিন হয়ে ওঠে। অনেক সময় আপনার জন্য খারাপ সময় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু মনে রাখবে খারাপ সময় বেশি দিন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ছোটখাটো বিপদে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছে শুরুতেই আপনার পেতে নিজেই সমাধান করার চেষ্টা করুন। নিজেকে সময় দিন, আপনি নিজেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন। যখন আপনি নিজেই নিজের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবেন, তখন আপনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবেন।