কলেজ বা ইউনিভার্সিটি তে পড়ার সময়ে আর্থিক অভ্যাস গুলো গড়ে তোলার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। এই দিনগুলোতে ছেলেমেয়েরা যা শেখে কষ্ট করে শিখে, তাদের সারা জীবন কাজে লাগবে।
হাই স্কুল পাশ করার পরে কলেজ, ইউনিভার্সিটি জীবনটা এতটা সহজ নয়। এসময় আপনার জীবনের অনেক পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে বাবা-মা এসময় নিয়ন্ত্রণ অনেকটা কমিয়ে দিবে। ইউনিভার্সিটি তে পড়ার সময় অনেক ভালো ছাত্র শেষ পর্যন্ত ভালো ফলাফল নিয়ে বের হতে পারে না কারণ তারা এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে উঠতে পারেনা।
ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির আগে যেখানে পদে পদে ছেলেমেয়েদের বাবা-মার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হতো, যেখানে সকালে ঘুম থেকে তোলার জন্য বাবা-মায়ের কষ্ট করতে হত, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বাবা-মায়ের শাসন ছাড়াই সময়মতো ক্লাসে গিয়ে হাজির হয়। বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের উপর অনেক দায়িত্ব কর্তব্য চলে আসে।
যদি আমাদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সব ধরনের দায়িত্ব-কর্তব্য বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা তাদেরকে সম্ভাব্য আর্থিক বিপদ সম্পর্কে অবহিত করতে পারি।
হিসেব করে খরচ করা:
অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে খণ্ডকালীন কাজ করে টাকা উপার্জন করে। কিন্তু এই টাকা তারা জমিয়ে রাখতে পারেনা। বন্ধুবান্ধব, আড্ডাবাজি করে, অপ্রোজনীয় কেনাকাটা করে অনেক টাকা নষ্ট করে ফেলে।
কিন্তু তারা যদি এই সময় হিসাব করে টাকা খরচ করে তাহলে তাদের কিছু টাকা জমা থাকবে। এ জমানো টাকা দিয়ে ফিক্সড ডিপোজিট, মিউচুয়াল ফান্ড এর মত বিনিয়োগ শুরু করা উচিত। আপনি যত তাড়াতাড়ি শুরু করবেন লম্বা সময় পরে আপনার টাকা কত বাড়বে।
জরুরী তহবিল তৈরি করা:
বিশ্ববিদ্যালয় অনেকেই হোস্টেলে থাকে। বাসার আরামের তুলনায় হোস্টেলে থাকা যেমন আরামদায়ক হয়ে ওঠে না। হোস্টেলের খাবার-দাবার বাসার মতো ভালো হয়না। এমনকি নিজের কাপড়চোপড় নিজেকে পরিষ্কার করতে হয়। এ সময় অনেকেই হোস্টেলের বাইরের খাবার দাবার খেয়ে থাকে। এমনকি কাপড়-চোপড় পরিষ্কারের জন্য লন্ড্রির সাহায্য নেয়। অপ্রয়োজনীয় খরচ করতে গিয়ে দেখা যায় যে মাস শেষ হওয়ার আগেই তাদের পিতা-মাতার থেকে পাঠানো টাকা শেষ হয়ে যায়। তখন আবার বাবা-মার কাছে টাকা চাইতে হয়।
বাবা-মার কাছে মাস শেষে টাকা চাওয়াটা অনেকটা জরুরী সময় সাহায্য চাওয়ার মত। এ অবস্থায় যাতে না পড়তে হয়, সেজন্য আগে থেকে জরুরি তহবিলের টাকা আলাদা করে জমা করা উচিত। যাতে কোন মাসের শেষে অতিরিক্ত টাকা দরকার হলে জরুরী তহবিল থেকে টাকা ব্যবহার করা যায়।
আর্থিক লক্ষ্য ঠিক করা:
অনেক ছাত্র-ছাত্রী দেশের বাইরে পড়ার স্বপ্ন থাকে। ভালো ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর শিক্ষা নেবার আশা যদি আপনি করে থাকেন, তাহলে আগে থেকে হিসাব করুন যে আপনার কত টাকার প্রয়োজন হতে পারে। তারপরে চিন্তা করুন যে আপনি কতদিন পরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করবেন। তারপরে আপনার এই আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করার জন্য টাকা জমানো শুরু করা উচিত। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই পকেট মানি, টিউশনির টাকা, খণ্ডকালীন চাকরি টাকা জমানো শুরু করুন। এই টাকা হয়তোবা অনেক বড় কোনো অংকে গিয়ে দাঁড়াবে না, কিন্তু আপনার বাবা-মার থেকে কিছুটা হল বোঝা আপনি কমাতে পারবেন। এরপরও যদি দেখেন আপনার প্রয়োজনীয় টাকা না জমে, তাহলে কিছুদিন বা কয়েক বছর চাকরি করে প্রয়োজনীয় টাকা জমিয়ে ফেলুন। আপনাকে যখন জমতে থাকবে, তখন কোনও কম ঝুঁকির বিনিয়োগ যেমন ফিক্সড ডিপোজিট মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করুন।
খণ্ডকালীন চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করুন:
সত্যি কথা বলতে গেলে আর্থিক ব্যবস্থাপনা তরুণ বয়সে অনেক কঠিন। আপনি যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হবেন, তখন আপনাকে হয়তো চাকরিতে যোগদান করতে হবে। কিন্তু এ সময় আপনার যেহেতু আগের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাই অনেক অল্প বেতনে কাজ করতে হবে। কিন্তু এতদিন আপনি যে পকেট মানি বাবা-মার কাছ থেকে পেয়ে আসছিলেন এখন হয়তো তা বন্ধ হয়ে যাবে। তার উপরে অল্প বেতনে চাকরী করতে আপনারও ভালো লাগবে না। কিন্তু আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করেন, বা ফ্রিল্যান্সিং করেন, তাহলে একদিকে আপনার যেমন কিছু আয় থাকবে, অন্যদিকে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা থাকবে। তখন আপনি চাকরিতে যোগদানের সময় আপনার বেতন নিয়ে মুলামুলি করতে পারবেন। যদি এমন দেখেন যে আপনাকে কোন কোম্পানি ভালো বেতন দিতে চাচ্ছে না, তখন অল্প বেতনে যোগদান করলেও আপনার খণ্ডকালীন চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং থেকে জমানো টাকা আপনাকে বেতন বাড়ার আগ পর্যন্ত আপনার জীবন যাত্রার মান ঠিক রেখে চলতে সাহায্য করবে।
সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন:
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রীরা স্বাধীনচেতা হয়ে ওঠে। ইচ্ছামত বন্ধুদের সাথে খাওয়া-দাওয়া ঘোরাঘুরি করে, নতুন গ্যাজেট কিনে টাকা খরচ করে। এ সময় তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা তেমন কোনো চিন্তা থাকে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে আপনি যদি সঞ্চয় করার অভ্যাস শুরু করেন তাহলে সারাজীবন আপনার কাজে লাগবে। আপনার আপদকালীন ফান্ড, বিনিয়োগ সবকিছুই আপনার সঞ্চয় এর উপরে নির্ভর করবে। আপনার পরিবারে যত টাকায় থাক না কেন, সঞ্চয় কে আপনার সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া উচিত।
এ কথা সত্যি যে, আপনার আর্থিক চিত্র একজন চাকুরীজীবি মানুষের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। আপনি হয়তো সত্যি কারের টাকা উপার্জন করা এখনো শুরু করেননি। কিন্তু কিছুদিন পরেই আপনি সেই দুনিয়াতে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। তাই আগে থেকে আর্থিক ব্যাপারে সচেতন হওয়া আপনার জন্য একটা বোনাস পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াবে।