ঠিক ততক্ষন পর্যন্তই আমরা একটা বাইকের উপর ঝুঁকি নিতে পারি যতক্ষণ পর্যন্ত সেটি সচল আছে। এবং অবশ্যই সাথে একটা রেইনকোর্ট থাকলে প্রস্তুতি টা আরো ভালো হয়। সেরকম একটা বড় লোন ও ঠিক একইভাবে কাজ করে।
ততক্ষন পর্যন্ত আপনার ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা ঠিক আছে যতক্ষন পর্যন্ত আপনাকে সুদ সমেত বেশি টাকা হারাতে হবে না। এইভাবেই দুই স্মার্ট ঋন গ্রহণকারী রবি এবং ফিরোজ ঋণগুলো পরিচালনা করেছিল।
ব্যক্তিগত ঋণ
রবি তার স্বপ্নের প্রকল্প, একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার ফ্র্যাঞ্চাইজি শুরু করতে প্রস্তুত। তবে তাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি এবং ব্যবসা স্থাপনের জন্য দশ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে রবি জানে যে ব্যাবসায়িক ঋণ পাওয়া আপনার আছেকত মুশকিল। কিন্তু সে যেটা পারে তা হল পার্সোনাল লোনের মাধ্যমে তার ফান্ডটাকে বাড়াতে পারে।
উদ্যোক্ত্যা জগতে নবাগত হওয়ায় রবি জানেন যে ব্যবসায় ঋন পাওয়া মুশকিল। একমাত্র তিনি ব্যক্তিগত ঋনের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করতে পারেন।
রবি তার ব্যাংকে ১৮% সুদে ১০ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত ঋণের জন্য অফার পেয়েছিলেন।
কিন্তু রবির বন্ধুরা তাকে এই ব্যক্তিগত ঋন নিতে নিরুৎসাহিত করেছিল। উচ্চ সুদের হার তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ ছিল। কিন্তু রবির জানা ছিল কিভাবে খুব বেশি অর্থ ব্যয় না করে সুন্দর ভাবে লোন পরিচালনা করা যায় এবং তার একটি একটি স্পষ্ট পরিকল্পনাও ছিল।
রবি যদি ৫ বছরের মেয়াদে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নেয়, তবে তাকে ১৫,২৩,২৩০ টাকা ফেরত দিতে হবে।
সুতরাং এখানে রবি কীভাবে ঋন পরিশোধ করে তার সেই পরিকল্পনা দেয়া হলো:
রবি দ্বিতীয় মাস থেকে তার নতুন ব্যবসা থেকে মাসিক ১ লক্ষ টাকা লাভ হিসাবে প্রত্যাশা করছে। সে এক বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের জন্য তার আয়ের একটি ভাল অংশ ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছেন।
রবির স্ত্রী চাকুরীজীবি, এবং প্রতি মাসে ৫০,০০০ রুপি আয় করে। যদি তারা এক বছরের জন্য পরিকল্পিত ব্যয় অনুসরণ করে তবে তারা সহজেই এই আয় সঙ্গে বিনিয়োগের পাশাপাশি তাদের প্রতিদিনের ব্যয় পরিচালনা করতে পারে।
রবি তার লোন পরিশোধের সিডিউল এমনভাবে পরিকল্পনা করল যাতে সে দ্বিতীয় মাস থেকেই প্রতিমাসে তার নিয়মিত মাসিক কিস্তি ২২৩৯৩/- টাকার পরিবর্তে ৯০,০০০/- টাকা করে পরিশোধ করতে পারে। এভাবে সে তার নাম কি মাত্র ১৪ মাসেই পরিশোধ করতে পারবেন এবং তাকে মাত্র ১,১৫,০১৮/- টাকা ইন্টারেস্ট বাবদ অতিরিক্ত বহন করতে হবে। এভাবে তার খরচ বাঁচবে ৪,০৮,২১২/- টাকা।
সে ব্যাংকে অনুরোধ করল তাকে যেন একটি অফসেট লোন অ্যাকাউন্ট করে দেয় যেখানে সে তার ব্যক্তিগত লোণটি তার একটি চলতি অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত করতে পারে এবং যে কোনও সময় তার ইচ্ছামত বাল্ক পেমেন্ট করতে পারেন। এটি তাকে অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের জন্য ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত যে কোন সম্ভাব্য বিধিনিষেধের পাশাপাশি ব্যক্তিগত লোন প্রাক-অর্থ প্রদানের জন্য অতিরিক্ত চার্জ থেকেও তাকে বাঁচায়।
রবি ৫ বছরের জন্য ঋন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ১২ মাসেরও বেশি সময় ধরে লোনের জন্য অফসেট মোডটি বেছে নেয় যাতে সে তার ইচ্ছা অনুযায়ী অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের সুযোগ পায়।
রবি যেহেতু সবেমাত্র তার ব্যবসা শুরু করছে, একজন বেতনভোগী ব্যক্তির মত তার কোন মাসিক বেতন চেকের ব্যবস্থাও নেই। সুতরাং, যদি সে কোন মাসে কোন সমস্যার মুখোমুখি হয় এবং সময়মতো অর্থ পরিশোধ করতে অক্ষম হয় তবে সে ঋন খেলাপি হয়ে যাবে। এটি তার সামগ্রিক আর্থিক জীবনের পাশাপাশি তার ক্রেডিট স্কোরকে প্রভাবিত করতে পারে। এই কারণেই সে পরিস্থিতি বিবেচনায় ১২ মাসের মেয়াদে ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা করেনি। এইভাবে, রবি তার ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত ঋন থেকে বের হওয়ার সেরা পরিকল্পনাটি তৈরি করার চেষ্টা করছে।
ক্রেডিট কার্ড ঋণ
আপনি কি জানেন যে আপনাদের কাছ থেকে যে টাকা আপনি তুলে(Withdraw) নিয়েছেন তা যে একটা লোন? হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, তাই সতর্কতার সাথে পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনি ফিরোজ সাহেবের মতো এর থেকেও সেরাটা বের করে আনতে পারেন।
ফিরোজের ক্রেডিট কার্ডে বকেয়ার পরিমাণ ছিল এক লাখ টাকা। ব্যাংকে থেকে কার্ডের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করে প্রতি মাসে মাত্র ২% হারে সহজেই পরিশোধযোগ্য ইএমআই বা কিস্তির ব্যবস্থা করতে বলেছিল। তারমানে ফিরোজ কে মাত্র ৯৪৫৬/- টাকা মাসিক কিস্তি হিসেবে দিতে হবে।
কিন্তু ফিরোজের বন্ধু সতর্ক এবং পরামর্শ দিল যে এতে তোমাকে ১,১৩,৪৭২/- টাকা পরিশোধ করতে হবে সাথে প্রসেসিং ফি বাবদ আরো ১০০০/- টাকা দিতে হবে। তার পরিবর্তে তুমি অন্য একটি কার থেকে ব্যালেন্স ট্রান্সপোর্ট করে এটাকে পরিশোধ করতে পারো।
কিন্তু ফিরোজের অভিমত ছিল যে ব্যালেন্স ট্রান্সফার কেবল তার পাওনা এক কার্ড থেকে অন্য কার্ডে স্থানান্তর করে এবং কিন্তু তার দায় হ্রাস করে না। বেশিরভাগ লোকই তার সাথে একমত হতেন।
তবে বাস্তবে, ভাল পরিকল্পনা এবং একটি ভাল অফার থাকলে, ব্যালেন্স ট্রান্সফারও ঋণ থেকে বেরিয়ে আসার সেরা বিকল্প হতে পারে, যা আপনাকে দায় থেকে পরিত্রান পেতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে রবি দ্বিতীয় কার্ড এর জন্যব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে এবং একটা ভালো অফারও উপায় যার মাধ্যমে সে তার সবগুলো বকেয়া ঋণ ইন্টারেস্ট ফ্রি ৪৫ দিনের জন্য দ্বিতীয় কার্ডে স্থানান্তরিত করে। এভাবে অতি সতর্কতার সাথে আয় ও ব্যয়ের সমন্বয় করে ৪৫ দিনের মধ্যে এক লক্ষ টাকা জোগাড় করে কার্ডের দায়মুক্ত হয় কোন প্রকার খরচ ছাড়াই।
সংস্থার সাথে অনুসন্ধান করেছিল এবং তার বিদ্যমান কার্ডের বকেয়া দ্বিতীয় কার্ডে ৪৫ দিনের সুদমুক্ত পিরিয়ড এবং জিরো প্রসেসিং ফি দিয়ে স্থানান্তর করার অফার পেয়েছিল। অর্থ ও ব্যয়ের সাবধানতার সাথে পরিকল্পনা করে রবি ৪৫ দিনের মধ্যে এক লক্ষ টাকা জোগাড় করতে পারত এবং একক অতিরিক্ত পয়সা না দিয়ে দ্বিতীয় কার্ড দিয়ে ধার করা টাকা নিষ্পত্তি করতে পারত।
আপনাকে এখানে যা করতে হবে তা হল যাচাই-বাছা্য়ের মাধ্যমে সেরা অফারটা খুঁজে বের করতে হবে এবং সেটা গ্রহণ করতে হবে।
আপনার কখন ব্যয়বহুল ঋণ গ্রহণ করা উচিত?
আপনি নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে ব্যয়বহুল লোনের জন্য বিবেচনা করতে পারেন:
কখন ব্যয়বহুল ঋণের চিন্তা মাথায় আনবেন না?
নিম্নলিখিত কারনগুলির জন্য ব্যয়বহুল ঋণের চিন্তা বিবেচনা করা উচিত নযঃ
আর্থিক প্রয়োজনের সময় ঋণগুলি আপনার ভাল বন্ধু হতে পারে, যদি আপনি সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা করে এবং এর পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে এগুলো ব্যবহার করেন।