রাশেদ ফ্লোরা কম্পিউটারস এ কর্মরত। তার পিতা, একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী তার শহরে সম্ভবনাময় একটি প্লট কেনার পরিকল্পনা নিয়ে তার সাথে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সেই জমি কেনা থেকে তার বাবা কিছু টা সরে এসেছে কারণ জমির দাম ১০লাখ টাকা এবং তার কাছে ৩লাখ টাকা কম আছে জমিটা কিনতে। কিন্তু রাশেদ তার বাবাকে বলল যে যেন তিনি জমিটা ক্রয়ের জন্য কথাবার্তা চালিয়ে যায়। সে কিছুদিনের মধ্যে সেই বাকি অতিরিক্ত তহবিল যোগাড় করবে। রাশেদ জানে সে খুব সহজেই একটা পার্সোনাল লোণ নিয়ে ঐ ০৩লাখ টাকার ব্যবস্থা করতে পারবে যেহেতু তার বেতন বছরে ৮লাখ টাকা। সে প্রায় ১০,২০০ টাকার ইএমআই দিয়ে তিন বছরের ব্যবধানে এই ঋণ পরিশোধের একটা পরিকল্পনাও করেছে। রাশেদ খুব খুশী যে সে তার বাবাকে সাহায্য করতে পেরেছে।
অন্যদিকে আবেদ চৌধুরীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আলাদা ছিল। তাকে জীবন বাঁচানোর জন্য একটা হার্ট সার্জারী করতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে কোনো বীমা করা ছিল না তবে প্রাইভেট কোম্পানিতে নিযুক্ত চার্টার্ড একাউন্টেন্ট মেয়ে মিথিলা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এল। সে দ্রুত ৪ লাখ টাকার একটা তহবিল যোগার করে ফেলল।
যে পরিস্থিতিতে এই লোক গুলো ব্যক্তিগত ঋণ নেক না কেন এতে একটা ভালো দিক হলো ব্যাংক কখনো জানতে চায় না টাকাটা আপনি কোথায় খরচ করছেন। তারা যেটাতে উদ্বিগ্ন সেটা হলো ঐ ঋণগৃহীত ব্যক্তির লোন পরিশোধের ক্ষমতা আছে কি না।
মানুষ কেন ব্যক্তিগত লোন নেয়?
এখানে ব্যক্তিগত ঋণ আবেদনকারীরা কোথায় এবং কিভাবে সেই ঋণের টাকা খরচ করেন তার একটা সমীক্ষা দেয়া হল
পারিবারিক আর্থিক সঙ্কট
আমরা কিছু লোন আবেদন কারীর সাথে কথা বলে জেনেছি যে বেশির ভাগ লোক পারিবারিক আর্থিক সঙ্কট এর কারণেই পার্সোনাল লোন নিয়েছেন। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩৭% ঋণ এই ক্যাটেগরিতে পড়ে।
ধার করা অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য
ব্যক্তিগত ঋণের আরেকটা বড় ব্যবহার হল বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধার করা টাকা পরিশোধ করা। কখনো কখনো অনেকে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ পরিশোধ করার জন্য ও পার্সোনাল লোন নিয়ে থাকেন, যেহেতু ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার সাধারণত ব্যক্তিগত ঋণের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। এই জাতীয় লোনের পরিমাণ মোট্মুটি ১০%।
পরিবারের সরঞ্জাম কেনার জন্য
টিভি, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদির মতো অ্যাপ্লিকেশন কেনার জন্যও অনেকে ব্যক্তিগত ঋণ গ্রহণ করে থাকে। এইটা সেইসব লোকেরা করে যারা মনে করে একটি সরঞ্জাম কেনা পুরো টাকা বেতন থেকে দিলে মাসিক বাজেটে ঘাটতি পরবে মূলত তারাই এধরনের লোন নিয়ে থাকেন। ১৬% লোক এ জাতীয় লোনের আবেদন করে থাকে।
ছুটির ভ্রমণের জন্য
ভ্রমণ, ব্যক্তিগত ঋণের ব্যবহারের একটি অন্যতম জায়গা যা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি সাধারণত সেইসব লোক গ্রহণ করে যারা মনে করে তার নিজস্ব তহবিল ভ্রমণের জন্য যথেষ্ট নয়। ৫% লোক এধরনের লোন গ্রহণ করেন।
বিবাহ এবং ফাংশন জন্য
বিবাহ বা পারিবারিক কোনও অনুষ্ঠানের মতো বড় অনুষ্ঠান যখন হয় তখন লোকে প্রায়শই ব্যক্তিগত ঋণ বেছে নেয়। বর্তমানে মানুষ বিবাহ অনুষ্টানে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। প্রায় ১৭% আবেদনকারী এ জাতীয় লোনের জন্য আবেদন করেন।
হোম লোনের ডাউন পেমেন্টের জন্য
অনেকে হোম লোনের ডাউন পেমেন্টের জন্য এজাতীয়ে ঋণ গ্রহণ করেন। ১৫% আবেদনকারীরা এই ধরনের বিকল্পটি গ্রহণ করে।
ব্যক্তিগত ঋণ নেয় কে?
ব্যাংকের দৃষ্টিকোণ থেকে, দুই ধরনের ঋণগ্রহীতা রয়েছে।
প্রথমটির ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে এবং তাই সম্পত্তি, শেয়ার, স্বর্ণ ইত্যাদির মতো কিছু সুরক্ষার(Security) বিপরীতে ঋণ দেয়া হয় এবং পরেরটি পার্সোনাল লনের জন্য কম ঝুকিপুর্ন এবং যোগ্য তাই বন্ধক এর প্রয়োজন পরে না।
স্পষ্টতই বেতনভুক্তরা এই কম ঝুকিপুর্ন শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত আর এরাই ব্যক্তিগত ঋণের জন্য সবচেয়ে ভালো প্রার্থী। বস্তুত আপনি যদি একজন ফুলটাইম চাকুরীজীবি না হোন তাহলেও এই পার্সোনাল লোন পাওয়াটা কঠিন।
সাধারণত ব্যক্তিগত ঋণ গ্রহণকারীদের বেশির ভাগের বয়েস ২৫-৩৫ এর মধ্যে। এরাই সবচেয়া ভালো প্রার্থী এবং এদের পরিমাণ প্রায় ৮০%। এই গ্রুপটা সাধারণত বেশি টাকাপয়সা নিয়ে লেনদেন করে এবং একটা ভালো জীবন যাত্রার মান খোঁজে। তাই এরা উচ্চ সুদের হার স্বত্বেও তারা নিজেদের চাহিদা এবং শখ পূরণ করে।
এই ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ আবার জায়গা বা শহর বুঝে আলাদা আলাদা। ধরেন আপনি মফস্বল শহরে থাকে তাহলে এর পরিমান একরকম আবার যদি মহানগর বা মেট্রোপলিটান সিটিতে থাকেন তাহলে আরেক রকম হবে।
ঋণ পরিশোধ
2000 এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংকগুলোকে সহজ ও সচ্ছল ছিল ফলে সহজেই লোন পাস হয়ে যেত। ব্যক্তিগত ঋণের জন্য শর্ত গুলো অনেক সহজ ছিল। পেট্রোল এর ক্ষেত্রেও একই রকম 2000 দশকের দিকে খুব সহজ ছিল তবে পরবর্তীতে পার্সোনাল লোন এর মত এগুলো ডিফল্ট করা শুরু করে।
যার ফলে সবকিছু খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়। ব্যাংকগুলো গত ৮-১০ বছর ধরে ব্যক্তিগত ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে খুব কঠোর অবস্থানে আছে। 2008 সালে বৈশ্বিক মন্দার কারণে ব্যাংকগুলোতে অনেক খেলাপির সংখ্যা বেড়ে যায়, পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকেও সুদের হার কমিয়ে ১২-১৪% আনতে হয়। তবে অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে ব্যাংকগুলি যোগ্যতার মানদন্ড আরও কঠিন করায় ডিফল্ট হার এখন প্রায় ১০-১২% এরও কম নেমে এসেছে। বর্তমানে পার্সোনাল লোন এর সুদের হার ও বেশ কম। ২০২০ থেকে এই রেট কমে এখন এককের ঘরে এসেছে।
ব্যাংক গুলো এখন অনেক বেছে বেছে ব্যক্তিগত লোন ছাড় করে এবং চাকুরীজীবী লোকদেরকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয় যেটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আপনি যদি কোনো ব্যাংকের পুরোনো কাস্টমার হয়ে থাকেন তবে আপনি আরো ভালো ইন্টারেস্ট রেট নিতে পেতে পারেন।