কেন আপনার একটা ব্যক্তিগত ঋণ নেয়া উচিত?
ব্যক্তিগত ঋণ অন্যান্য ঋণগুলো থেকে সবচেয়ে সহজে নেওয়া যায় যখন কারো হঠাৎ টাকার দরকার হয়। ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করার প্রক্রিয়া সবচেয়ে সহজতর, কাগজপত্রের ঝামেলা কম এবং সর্বোপরি সময় কম লাগে। যে কোন ব্যক্তির মোটামুটি মাসিক আয় থাকবে সে ব্যক্তিগত ঋণের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত ঋণের যৌক্তিকতা নিয়ে অনেক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার অনেক বেশি, তার উপরে ঋণের টাকা ফেরত দেয়ার সময় কম, এই বিষয়গুলি অনেক সময় অনেক বেশি ইএমআই নির্ধারণ করে ফেলে যা ঋণগ্রহীতার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তিগত ঋণ নেয়ার পর এই ব্যাপারগুলি অনুধাবন করতে পারে। সে জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি কে ব্যক্তিগত ঋণ নেয়ার আগে তার ঋণ নেয়াটা যুক্তিযুক্ত কিনা সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
এখানে আমরা কয়েকটি কারণ উল্লেখ করছি যখন আপনারা ব্যক্তিগত ঋণ নিতে পারেন।
তবে একটা কথা বলে রাখা দরকার যে প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার আর্থিক অবস্থা ভিন্ন হতে পারে। তার পরেও আমরা কয়েকটি যুক্তিযুক্ত কারণ উপস্থাপন করছি যেগুলো আপনি ঋণ নেয়ার আগে চিন্তা করতে পারেন।
ক্রেডিট কার্ডের বাকি প্রদান করতে: ক্রেডিট কার্ডের যদি বেশি টাকা বাকি থেকে যায় তখন একসাথে সেই পরিমাণ টাকা জমা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ক্রেডিট কার্ডের যদিও মাসিক সুদের হার অনেক কম যা ১%-২% এরমধ্যে, কিন্তু সারা বছর হিসাব করলে সেই ২% বেড়ে গিয়ে বাৎসরিক প্রায় ২৪% হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে আপনি যদি ১৫% সুদের হারে একটি ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে ক্রেডিট কার্ডের বাকি টাকা একবারে দিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনার কিছু টাকা অন্তত বাঁচবে।
জরুরী চিকিৎসার খরচ মেটাতে: আপনার যদি হঠাৎ করে পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং অনেক টাকা চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়ে যায়, তাহলে ক্রেডিট কার্ড থেকে খরচ না করে সেই টাকা একটি ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে খরচ করা অপেক্ষাকৃত ভালো বুদ্ধি হবে। যেহেতু ব্যক্তিগত ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ এবং অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে তাই আপনি জরুরী চিকিৎসা খরচ মেটানোর জন্য কম সময়ে প্রয়োজনীয় টাকা হাতে পেয়ে যাবেন।
নিশ্চিত উচ্চ রিটার্ন স্কিমে বিনিয়োগ করা: আপনার যদি হঠাৎ করে নিশ্চিতভাবে উচ্চ রিটার্ন স্কিমে বিনিয়োগ করার সুযোগ চলে আসে, এবং অন্য কোন উপায় হতে টাকা যোগার করার কোন রাস্তা না থাকে, তখন স্বল্প সময়ের জন্য ব্যক্তিগত ঋণ নিতে পারেন। তবে যতটা সম্ভব এই ঋণের পরিমাণ কম নেয়ার চেষ্টা করবেন।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোনো বড় খরচ মেটাতে: আপনার যদি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোন বড় খরচ হাতে চলে আসে এবং আপনার কাছে সেই পরিমাণ টাকা যদি না থাকে তখন প্রয়োজনে ব্যক্তিগত ঋণ নিতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি যে বাড়িতে থাকেন বাড়িটি মেরামত করা দরকার। কিন্তু এক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন আপনার ঋণের টাকা দিয়ে যেন অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করে টাকা নষ্ট না হয়।
এবার কিছু দুর্বল কারণ আলোচনা করব যার কারণে মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ নেয়।
বর্তমান বাজারে কয়েকটি বিশেষ ধরনের ব্যক্তিগত ঋণ রয়েছে যার সুদের হার সাধারণ ব্যক্তিগত ঋণ এর চেয়ে তুলনামূলক কম।
গাড়ি কেনা: জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক সময় দাড়ি একটি অতি প্রয়োজনীয় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। গাড়ি কেনার জন্য অনেকেই আমরা গাড়ির ঋণ নিয়ে থাকি। তবে গাড়ি কেনার জন্য ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে যখন যতটা সম্ভব সুদের হার কম এবং মেয়াদ দীর্ঘ করার ব্যাপারে চেষ্টা করতে হবে।
বিনিয়োগ: ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে কখনো বিনিয়োগ করার চিন্তা করবেন না। কারণ বিনিয়োগ সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। আপনার যদি বিনিয়োগ থেকে লাভ না হয় তাহলে আপনার সবদিক থেকেই ক্ষতি।
ব্যবসার জন্য: ব্যবসা করার জন্য কখনোই ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে তা ব্যবসায় ঢালবেন না। ব্যবসার জন্য আলাদাভাবে বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে যেগুলো ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত।
অন্য ঋণের টাকা পরিশোধ করতে: আপনার যদি অন্য ধরনের কোনো ঋণ থাকে, তাহলে সেই দিনের বাকি টাকা পরিশোধ করার জন্য কখনোই ব্যক্তিগত ঋণ নেবেন না। অনেকের কাছ থেকে হয়তো শুনতে পারেন তারা এই কাজটি করেছে কিন্তু এটি সবচেয়ে বড় বোকামি।
সবশেষে, ঋণগ্রহীতার যেকোনো ধরনের ঋণ নেয়ার আগে বাজারে যাচাই করে নেয়া উচিত, প্রয়োজনে যে পরিমাণ টাকা খরচ হবে তা আস্তে আস্তে চিন্তা করে জমা করা উচিত। যদি একদমই কোন উপায় না থাকে তখনই ঋণের কথা চিন্তা করবেন।