
রাসেল মাহমুদ সবসময় তাড়াহুড়ো করে কাজ করেন। তিনি তার কাজকে স্তুপ করা ঘৃণা করেন এবং যে কোনো জিনিস তার রাস্তা থেকে এবং মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পছন্দ করেন। বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তার সময় জ্ঞান, দ্রুততা এবং বিবিধকাজ একসাথে করার যে গুন তা ছিল অসাধারণ। কিন্তু তিনি হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নেন যে হোম লোণের ডাউন পেমেন্ট হিসেবে পার্সোনাল লোন নিয়ে নেন।
যদিও তিনি শুধু একটি ঋন নিয়েই থেমে থাকেননি। তিনি নিজের নতুন বাড়িটিও ব্যক্তিগত ঋন দিয়ে সজ্জিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন তার পরিশোধের জন্য তিনটি লোন রইল, একটি হোম লোন এবং দুটি ব্যক্তিগত লোন, যার সুদের হারও ছিল বেশ চড়া। যা হোক তিনি কয়েক মাস খুব কষ্ট করে জরিমানাসহ ব্যবস্থা করেছেন, কিন্ত সময়ের কাটা অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেল। অপ্রত্যাশিত খরচ ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং ঋন পরিশোধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ডিফল্ট হওয়া শুরু হয়।
রাসেল সাহেবের দ্রুত সমাধান দরকার। সৌভাগ্যবশত, তার তাড়াহুড়ো স্বভাব টা বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও করেছিলেন এবং অল্প বয়সেই তা শুরু করেছিলেন। তার কিছু নিরাপদ বিনিয়োগ ছিল, কিছু শেয়ার ছিল যা ভালো করেছিল এবং সময়ের সাথে সাথে স্টক গুলিও বাড়ছিল। তিনি কিছুটা শান্ত ভাবে বসে চিন্তা ভাবনা করে তার আর্থিক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। তিনি ব্যক্তিগত ঋণের দিকে না গিয়ে তার কিছু সম্পদ বা এফডি ভাঙ্গায়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তার এসব করার মত ধর্য ছিল না, পাশাপাশি তিনি তার বিনিয়োগগুলোতে কোনো অবস্থাতেই ব্যাহত হোক চাননি, কারণ তিনি দ্রুত অবসরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সৌভাগ্যবশত ঋনগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই, তিনি তার এই রিজার্ভগুলির সাহায্য নিয়েছিলেন।
তিনি তার কিছু সম্পদ ভেঙ্গে ফেলেন এবং লোনে কিছু বড় অংশ শোধ করেন এবং অন্যান্য খেলাপি ঋন গুলির প্রতিও যত্ন নেন। তিনি তার বর্তমান গৃহঋন পুনঃঅর্থায়ন করার জন্য একটি হোম লোন ট্রান্সফারও বেছে নিয়েছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন যে এই পরিবর্তনটি তাকে কম সুদের হারে উপকৃত করবে, এবং নতুন প্রতিষ্ঠান তার বর্তমান ঋন প্রদানকারীর চেয়ে ভাল সুদের হার এবং কম মেয়াদ প্রদান করবে।
এটি তার লোণের চাপকে অনেক সহজ করবে অতীতের বর্ধীত সুদের হার থেকে বাঁচাবে কিন্তু নতুন গ্রাহক হিসেবে তার কিস্তির সংখ্যা কমে যাবে শুধু মাত্র এই একটি অসুবিধাই ছিল।
যদিও রাসেল সাহেব একা নন, তাঁর মতো আরও অনেকেই আছেন যারা ঋন শোধ করার প্রক্রিয়াগত ত্রুটিতে ভুগছেন।
রাসেলে মতো দ্বিধা এড়াতে, আপনাকে খুব সাবধানে ঋনের বিকল্প বেছে নিতে হবে। জেনে রাখা ভালো যে স্বল্প মেয়াদের জন্য ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার খুব বেশি।
এখানে কয়েকটি বিকল্প দেয়া হল যা আপনারা যাচাই করে দেখতে পারেনঃ
ক) শেয়ার, সিকিউরিটিজ, ফিক্সড ডিপোজিট, ইন্স্যুরেন্স পলিসি ইত্যাদির মতো আপনি এখন পর্যন্ত যা বিনিয়োগ করেছেন তা ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি বীমা সংস্থা বা কোনও ব্যাংক থেকে আপনার জীবন বীমা পলিসির আত্মসমর্পণের মূল্যের বিপরীতে ঋন গ্রহণ করতে পারেন বা যদি আপনার পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনও কর্মী ভবিষ্যত্ তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) অ্যাকাউন্ট থাকে তবে সেখান থেকে ঋন নিতে পারেন। ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হারের তুলনায় অবশ্যই তা কম হবে।
খ) আপনি নিজের মালিকানাধীন সম্পত্তি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপনি সম্পত্তি বিপরীতেও ঋন পেতে পারেন। এই ঋণের জন্য আপনি যে পরিমাণ অর্থ পেতে পারেন তা সম্পত্তির মোট মূল্যের উপর নির্ভর করে। এটি সাধারণত ১লাখ থেকে ৩ কোটি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ঋণের আরেকটি ভাল দিক হল যে আপনি ব্যক্তিগত ঋণের মেয়াদের তুলনায় দীর্ঘ মেয়াদ (২০ বছর পর্যন্ত হতে পারে) ঋন পেতে পারেন, যাতে আপনার কিস্তির পরিমাণ অনেক ছোট হবে। যদিও এর অর্থ হল আপনি একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য সুদ পরিশোধ করবেন। এই ঋনগুলি কম সুদের হয় সাধারণত, যা প্রায় ৮-১০% এর কাছাকাছি হতে পারে এবং বর্তমান বাজারে সুদের হার হ্রাসের ক্ষেত্রে এটি কম। এটি নিশ্চিত করবে প্রতি মাসে আপনার কম অর্থের কিস্তি হবে এবং তাই আপনার সম্পদের উপর চাপ পড়বে না, যা আপনাকে অর্থ সঞ্চয় করারও সুযোগ করে দিবে। একমাত্র ক্ষতিটি হল যদি আপনি পুরো পরিমাণ পরিশোধ করতে অক্ষম হন তবে আপনার সম্পত্তি ছেড়ে দেয়ার ঝুঁকি আছে।