সারা বিশ্বজুড়ে COVID-19 অনেক মানুষকে চাকরি ছাড়া করেছে। এই প্যান্ডেমিকের সময়ে মানুষের মুখে মুখে একই কথা ঘুরেফিরে আসছে। অর্থনৈতিক মন্দা চলাকালীন সময়ে কিভাবে চাকরি খুঁজে পাব? আসুন ভেবে দেখি।
COVID-19 সারা বিশ্বকে একবারে নাচিয়ে ছেড়েছে। এতে শুধু সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য ভীতি বাড়িয়ে বিভিন্ন দেশের মানুষকে ঘরবন্দি করেই থেমে থাকেনি, সাথে সাথে অর্থনৈতিক মন্দা কেউ জাগিয়ে তুলেছে। এই মহামারী ভ্রমণ শিল্পের মতো কয়েকটি শিল্পকে প্রায় ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। অনেক কোম্পানি তাদের কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করিয়েও ব্যবসা ঠিকমত করতে পারছে না, তারা শীঘ্রই তাদের ব্যবসা বন্ধ অথবা কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় কর্মীদের জন্য নতুন চাকরি পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আপনারা চাইলে কয়েকটি ধাপে পরবর্তী চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন:
সংস্থা নির্বাচন করে আবেদন করুন:
চাকরি খুজতে গিয়ে আপনার হয়তোবা মনে হতে পারে যে আপনি যেই আবেদনগুলো করছে সেগুলো অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। আপনিও হয়ত অনেক দিন ধরে কোনও সংস্থা থেকে ফোন কল, বা রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে কোনও উত্তর পাবেন না। এরকম অর্থনৈতিক মন্দার সময়, আপনি শুধুমাত্র যেসব কোম্পানিতে কাজ করতে চান সেগুলোতেই আবেদন করা উচিত। বেশিরভাগ চাকরিপ্রার্থীরা এ সময় তেমন কোন চিন্তাভাবনা না করে যেখানেই চাকরির বিজ্ঞপ্তি পায় সেখানেই আবেদন করে বসে। সংস্থা নির্বাচন করে, আপনার সিভিটাকে সাজিয়ে যদি আপনি আবেদন করেন, তাহলে নিশ্চিত হতে পারেন যে অন্যান্য সাধারণ আবেদনকারী থেকে আপনি আলাদা থাকবেন।
আপনার শিল্পটি ভেবেচিন্তে নির্বাচন করুন:
অনেক সময় এর চাকরি চলে যাওয়ার কারণ এমন হতে পারে যে- আপনি যেই শিল্পের কাজ করছে সেই শিল্পের সার্বিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যেমন ধরুন বাংলাদেশ থেকে এখন বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর যে শিল্প তাদের এখন বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই অফিস গুলো এখন বন্ধ। এরকম কোন শিল্পে আপনি কাজ করে থাকলে আপনার অন্য কোন শিল্প বা কোম্পানির খোঁজা উচিত যারা অর্থনৈতিক মন্দার সময় ভালোভাবে চলতে পারছে। তাই কোনো সংস্থার কাছে আবেদন করার আগে জানার চেষ্টা করুন যে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন যাচ্ছে। যেমন ধরুন খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যারা অনলাইনে সেবা দান করে তারা মোটামুটি এই অবস্থায় ব্যবসা করে যাচ্ছে।
নিজস্ব জগতের বাইরে বিকল্পগুলি অনুসন্ধান করুন
কঠিন সময় আমাদেরকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে, অনেক ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বাধ্য হই। এটা শুধুমাত্র কোম্পানি বা কাজের ক্ষেত্র পরিবর্তন নয়, অনেকক্ষেত্রে প্রয়োজনে দেশের বাইরেও যাবার চিন্তা করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ: আপনি সেলস কিংবা বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে থাকলে পরবর্তীতে আপনার এই জ্ঞান কে ব্যবহার করে প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্টে কাজ করার চিন্তা করতে পারেন। আবার টেকনোলজি সেক্টরে কাজ করলে বিদেশে চাকরির জন্য আবেদন করে দেখতে পারেন।
সম্ভাব্য সবগুলো চ্যানেল ব্যবহার করুন
চাকরি খোঁজার জন্য শুধুমাত্র চাকরির ওয়েবসাইট, খবরের কাগজে চাকরি খোঁজা সীমাবদ্ধ রাখবেন না। সম্ভব হলে জব ফেয়ার বা চাকরির মেলায় অংশগ্রহণ করে আপনার জন্য সঠিক চাকরিতে খুঁজে দেখতে পারেন, প্রয়োজনে নিয়োগকর্তার সাথে সরাসরি কথা বলে আপনার অভিজ্ঞতার কথা তাকে জানাতে পারেন। এছাড়া আপনার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই ভাইদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। হয়তো তাদের মাধ্যমে একটি ভাল চাকরির সুযোগ পেতে পারেন। এছাড়াও আপনার লিংকডইন প্রফাইল হালনাগাদ করুন এবং আপনার প্রথম ডিগ্রী ও দ্বিতীয় ডিগ্রির কানেকশনের মানুষরা যে পোস্ট দেয় সেগুলোর উপরে নজর রাখুন।
আপনার সিভি কাস্টমাইজ করুন
অনেকেই যে ভুলটা করে থাকে সেটা হচ্ছে একই সিভি সবগুলো কোম্পানিতে জমা দেওয়া। এই ভুলটা কখনোই করবেন না। যখন আপনি মোটামুটি কয়েকটা চাকরি এবং সংস্থা নির্বাচন করেছেন, তাদের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে আপনার সিভিকে কাস্টমাইজড করুন। আপনার একটু সময় লাগলেও সাধারণভাবে যারা গড়পরতা সিভি জমা দিয়ে যায় তাদের থেকে আপনার সিভি আলাদা করে চোখে পড়বে।
সম্পর্কে বিনিয়োগ করুন
চাকরি খোঁজার সময় মাথায় রাখবে যে শুধুমাত্র স্বাভাবিক নিয়মে চাকরি খুঁজে গেলেই চলবেনা। আমাদের দেশে অনেক কোম্পানিতে চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়া ছাড়াই অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মাধ্যমে চাকরি হয়ে যায়। আগে আমরা যেমন শুনেছি যে মামা চাচা জোর না থাকলে চাকরি হয় না। বর্তমান সময়ে আপনার নেটওয়ার্কিং ভালো থাকলে চাকরি পেতে সমস্যা হবে না। তাই আপনার শিল্পে যারা কাজ করে তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এই মানুষগুলোই আপনাকে বিপদের সময় কেউ না কেউ এগিয়ে এসে একটি ভালো চাকরির সন্ধান দিতে পারে।
একটা কথা মাথায় রাখবেন, যে এই পয়েন্ট গুলো আপনাকে হয়তো চাকরি পেতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু আপনার আগে থেকেই নিজের আর্থিক ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনার চাকরি চলে গেলে হয়তো কয়েক মাস লাগবে নতুন একটি চাকরি পেতে। ওই সময়টাতে আপনার মাসের শেষে বেতন না আসলেও আপনার যাতে চলতে কষ্ট না হয় সে জন্য আপনার আপদকালীন সঞ্চয় জমিয়ে রাখা উচিত। অন্ততপক্ষে ৬ মাস বা সম্ভব হলে আপনার এক বছরের চলার খরচ আপদকালীন সঞ্চয় হিসেবে জমা করুন। এবং তার পরে অতিরিক্ত সঞ্চয় গুলো আপনি দীর্ঘমেয়াদি কোন পরিকল্পনাতে বিনিয়োগ করুন।