ক্যারিয়ার পরিবর্তন সম্ভাবনাময় ও উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে, তবে আপনি যদি এই পর্যায়ে আপনার আর্থিক পরিকল্পনা না করেন, তবে আপনি নিজেকে আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।
আপনি যদি দীর্ঘদিন চাকরিতে এক জায়গায় আটকে থাকেন, আপনার পেশাগত বা ব্যক্তিগত যদি কোনও উন্নতিও না হয়, তাহলে কয়েকদিন পর ওই চাকরিটা আপনার কাছে স্রেফ নির্যাতনের মতো লাগবে। এভাবে কয়েক বছর যাওয়ার পরে আপনার মনে হবে যে আপনি তেমন কোন কাজ করছেন না, আপনার কাজগুলো অটোপাইলটে প্লেন চালানোর মতো হয়ে যাচ্ছে। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে আপনার পেশাগত জীবনে পরিবর্তন আনা দরকার। পেশাগত জীবনে পরিবর্তন এক এক জনের কাছে এক এক রকম হতে পারে। কারও কারও জন্য দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করার লক্ষ্যে নতুন ধরনের ক্যারিয়ার পথ হতে পারে, আবার কারও জন্য ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়া হতে পারে।
ক্যারিয়ার পরিবর্তন করা একই সাথে যেমন উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে, আবার আপনার আর্থিক উন্নতির ব্যাঘাতও ঘটাতে হতে পারে। আপনি যদি আপনার প্রিয় দিনের স্বপ্ন পালন করতে গিয়ে বর্তমান চাকরি ছেড়ে দেন, তার ফলে আপনি কম বেতনে কোন চাকরিতে চলে যেতে পারেন বা অন্য শহরে চাকরি নিলে আপনার জন্য শুরুতে অতিরিক্ত কিছু ব্যয় বহন করতে হবে।
এই আর্টিকেলে, আমরা আপনাকে অর্থের ঝুঁকি না নিয়ে কিভাবে আপনার ক্যারিয়ার সহজে পরিবর্তন করতে পারেন সে বিষয়ে আপনাকে বলতে যাচ্ছি।
আপনার নতুন পেচেক সম্পর্কে সঠিক প্রত্যাশা রাখুন:
ক্যারিয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনার হয়তো বেতন পরিবর্তন হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি আপনার পছন্দমত কোন কম বেতনের কাজে যোগদান করেন, তাহলে এই নতুন বেতন অনুযায়ী আপনার জীবন যাপন ঠিক করে ফেলতে হবে। তবে অবশ্যই আপনি কাজে যোগদানের আগে আপনার বেতন বাড়ানোর জন্য নিয়োগকর্তার সাথে কথা বলে নিবেন। সময় থাকতে ওই ধরনের কাজের অন্যরা কিরকম বেতন পায় তা আগে থেকে জেনে নিলে আপনি সেই অনুযায়ী আপনার বেতনের চাহিদার কথা জানাতে পারবেন।
এক সময় আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার ক্যারিয়ার পরিবর্তন করা আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা। আপনি যদি আপনার পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হন, তাহলে কম বেতন আপনার পরিবারের উপর কি প্রভাব ফেলবে? এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে ক্যারিয়ার পরিবর্তনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
নতুন বেতনে এখনই জীবনযাপন শুরু করুন:
যদি আপনার নতুন চাকরিতে উল্লেখযোগ্য বেতন কাটা পরে, আপনাকে সেই অনুযায়ী আপনার বাজেটটি পুনরায় ঠিক করে নিতে হবে। আপনার নতুন বেতনে জীবনযাপন করতে যেন হেঁচকি না ওঠে সেজন্য আগে থেকে ছোট ছোট পরিবর্তন শুরু করে দিন। যেমনঃ আপনার আগের চাকরিতে আপনি অফিস পিক-আপ এবং ড্রপ-অফ সেবা পেতে পারেন, এবং নতুন অফিসে এই সেবা যদি না থাকে তবে আগে থেকেই পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে যাতায়াত শুরু করে দিন। প্রয়োজনে যাতায়াতের ব্যয় কমাতে নতুন কাজের স্থান এর কাছাকাছি অল্প টাকায় বাসা ভাড়া করে ফেলুন।
আপনার ক্যারিয়ার পরিবর্তন করার সময় একটি খণ্ডকালীন কাজ করুন:
আপনি যদি ভিন্ন কোন শিল্পে যোগ দিতে যান, তাহলে জেনে নিন হই শিল্পে কি কি ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেট থাকলে আপনার চাকরি পেতে সুবিধা হবে। আপনি প্রতিদিনের কাজের শেষে অথবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেশন গুলো করে নিতে পারেন। ট্রেনিং সার্টিফিকেট হয়ে যাওয়ার পরে সম্ভব হলে খণ্ডকালীন কাজ শুরু করে দিন। নতুন ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার খণ্ডকালীন কাজের অভিজ্ঞতা আপনাকে নতুন চাকরি পেতে সাহায্য করবে।
আপনি যদি নিজের ব্যবসা শুরু করতে যান, তাহলে আপনার উদ্যোগের উপরে খণ্ডকালীন কাজ শুরু করে দিন। পরবর্তীতে আপনি যখন পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী হবেন তখন আপনার বর্তমান চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন। একবারে চাকরি ছেড়ে উদ্যোগ তাহলে আপনার আর্থিক ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে।
১-২ মাসের বেতন না পেলেও চলার জন্য প্রস্তুত থাকুন:
আপনার পুরনো চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরি বা উদ্যোগ সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এ সময় হয়তো আপনার বাড়তি কোনো আয়ের এর উৎস থাকবে না। তাই কয়েক মাসের বেতন না পেলেও আপনার জীবন যাপনে যেন কোনো সমস্যা না হয় সেই বিষয়ে আগে থেকে প্রস্তুতি নিন। আবার ধরুন আপনি নতুন একটি চাকরি শুরু করেছেন, তখন পুরনো চাকরিতে আপনার নোটিশ পিরিয়ড সহ নতুন চাকরিতে বেতন পেতে এক বা দুই মাস দেরি হতে পারে। তখন আপনার নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচের টাকা আগে থেকেই জমিয়ে রাখুন।
আপনি যদি পরবর্তী চাকরি নিশ্চিত না করে কোনো কারণে আগেই চাকরি ছেড়ে দেন, তাহলে 3 থেকে ছয় মাসের খরচের সমপরিমাণ টাকা আগেই জমিয়ে রাখুন। যদি কোন টাকা একেবারে জমানো না থাকে প্রয়োজনে অল্প সময়ের জন্য অল্প টাকা ঋণ করতে পারেন।
আপনার নিজস্ব স্বাস্থ্য বীমা করে রাখুন:
আপনি যখন একটি ক্যারিয়ারের পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন বেতন কমে যাওয়ার পাশাপাশি, নতুন কর্মক্ষেত্রে একই রকম স্বাস্থ্য বীমা নাও করতে পারে। এজন্য আপনার নিয়োগকর্তা এটি দিচ্ছেন কিনা তা বিবেচনা না করেই আপনার নিজের স্বাস্থ্য বীমা করে নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্য বীমা না থাকলে, হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনার কয়েক লক্ষ টাকা একবারে খরচ হয়ে যেতে পারে। আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য বীমা থাকলে এই জাতীয় জরুরি অবস্থা সহজে সামাল দিতে পারবেন।
আপনার নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করুন:
ক্যারিয়ার পরিবর্তন অনেক সময় অনেকের জীবনে হতাশার হয়ে দাঁড়ায়। তাই পরিবর্তন করার আগে আপনার ভালভাবে যাচাই করে নেয়া উচিত পরিবর্তনটি ঠিক হচ্ছে কিনা। আপনি আপনার পরিবারের সদস্য, বন্ধু বন্ধুবান্ধব আত্মীয় প্রয়োজনে আলোচনা করুন। সম্ভব হলে আপনি যে শিল্পে কাজ করছেন নতুন যে শিল্পে কাজ করতে যাচ্ছেন সেই শিল্পে কাজ করা মানুষজনের সাথে যোগাযোগ করে অবস্থা যাচাই করে নিন। বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং সভা, কনফারেন্স, এবং মিটাপে অংশগ্রহণ করে আপনি আপনার নেটওয়ার্ক বাড়াতে পারেন। দরকার হলে পেশাগত জীবনে যারা সিনিয়র রয়েছেন তাদের সাথে পরামর্শ করুন ও দিকনির্দেশনা নিন।